
আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল,দশমিনা(পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় কৃষিঘর বা পলিনেট হাউস পদ্ধতিতে উদ্যোক্তা কৃষকরা চাষাবাদ করার কারনে বদলে যাচ্ছে কৃষি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের জন্য ফসলি জমিতে ফলন তেমন ভাল হয় না। কৃষকরা বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি পলিনেট হাউস বা কৃষিঘরকে বেছে নিয়েছে। বিশেষ এই কৃষিঘরে কৃষকরা বারো মাসই ফসল চাষাবাদ করতে পারছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে উদ্যোক্তা যুব কৃষকদের মধ্যে পলিনেট হাউস বা কৃষিঘর পদ্ধতিতে ফসলের চাষাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের আওতায় পলিনেট পদ্ধতিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন ছাড়াও পলিনেট বা কৃষিঘর পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চারা উৎপাদন করছে। পলিনেট হাউসে চাষাবাদ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন থাকায় কীটপতঙ্গেও আক্রমন করতে পারে না। পলিনেট হাউসে সাধারনত জৈব সার ব্যবহার করা হয়।
উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা পলিনেট পদ্ধতিতে ফসল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এছাড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কৃষকরা পারিবারিক পুষ্টির বাগান করে চাহিদা পূরন এবং স্বনির্ভর হওয়ায় আর্থিক লাভবান হচ্ছে। কৃষকরা তাদের অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনার আশেপাশে পলিনেটে আবাদ করে সবজি চাষ ও বিভিন্ন ফসলের চারা উৎপাদন করছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের আবাদি-অনাবাদি ও চরাঞ্চল এবং বসতঘরের আশেপাশে পলিনেট পদ্ধতিতে আবাদ করে কৃষকরা সফলতা অর্জন করছে। এই পদ্ধতিতে চাষ করে কৃষকরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের আওতায় পলিনেট পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। পলিনেট পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে আগাছা কম হয় এবং ফলন ভাল হয়। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষক এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের আওতায় প্রনোদনা সহায়তা পেয়ে চাষাবাদ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে সাফল্য দেখে আশেপাশের অন্যান্য কৃষক পলিনেটে চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষি জমিতে পানি থাকায় চাষাবাদ করতে পারতো না। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা নিজেরাই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। স্থানীয়রা আগাম চাহিদা মেটাতে পলিনেটে ফসল চাষ ও চারা উৎপাদন করে বাজারে চাহিদা মিটানেরা চেষ্টা করছে। উপজেলায় দফায় দফায় বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে কৃষকরা বার বার লোকসানে পড়লেও চলতি মৌসুমে পলিনেটে চাষাবাদ করে কৃষকরা সফলতা পেয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ বলেন,পলিনেটে কৃষকদেরকে চাষাবাদে উৎসাহিত করা হয়। এর ফলে ফসলের উৎপাদন বেড়েই চলছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী ও উদ্বুদ্বকরনের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষি উপকরন পেয়ে পতিত জমির পাশে পলিনেট পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করে উপজেলার কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষকরা পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পলিনেটে সবজির চারা উৎপন্ন করে নতুন স্বপ্ন বুনছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাফর আহমেদ জানান,অত্র উপজেলা একটি কৃষি বান্ধব জনপদ। এই জনপদের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর এবং অত্র উপজেলার যে কোন স্থানেই ভাল ফসল উৎপাদন হয়। এই উপজেলায় কৃষকদের সহযোগিতায় কৃষি বিপ্লব ঘটানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদর্শনী করে কৃষক ও কিষানীদের মধ্যে আর্থিক স্বনির্ভরতা বাড়ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আবাদি-অনাবাদি জমিতে কৃষি প্রদর্শনী এবং শীতকালিন ফসলের চাহিদার কথা চিন্তা করে কৃষকরা পলিনেট পদ্ধতিতে আবাদ করে সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা নিজেরাই পলিনেটে সবজি চাষ ও চারা উৎপন্নের জন্য ঝুঁকে পড়েছে। পলিনেট হাউস বা কৃষিঘর তৈরির মাধ্যমে বারোমাসই চালকুমড়া,ধনেপাতা,মিষ্টিকুমড়া,করলা,ফুলকপিসহ অসময়ে সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে কৃষকদের চাষাবাদে এসেছে বৈচিত্র এবং বদলে যাচ্ছে কৃষি। ফলে উপজেলায় পলিনেট পদ্ধতিতে সবজি ফসল ও চারা উৎপাদন করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

