দীপক কুমার সরদার, দাকোপ : দাকোপ উপজেলার পশুর নদীর কুল ঘেষা মোংলার একমাত্র যৌনপল্লী বানিশান্তা পতিতা পল্লি। এ পল্লীর বেশির ভাগ যৌনকর্মী মধ্যবয়সী। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে। টিনএজদের পছন্দের তালিকায় মধ্যবয়সীদের সংখ্যাই বেশি বলে দাবি যৌনকর্মীদের। সরজমিনে বানিশান্তার পতিতা পল্লীতে গেলে এ তথ্য পাওয়া যায়। এখানে চল্লিশউর্ধ্ব প্রায় অর্ধ শতাধিক যৌনকর্মী কর্মহীন হয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এক সময়ে জৌলুস জীবন ছিল তবে এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন কষ্ট মাথায় নিয়ে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। যৌনকর্মক্ষমতা হারিয়ে অন্যের ঘরে ঝিঁ এর কাজ করছেন। পান থেকে চুন খসলেই কপালে জুটে নির্যাতন। এদের বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য সহযোগিতা কপালে জুটে তা খুবই অপ্রতুল। দু’চারজন যৌনকর্মীদের ঘরে ঝিঁ এর কাজ করলেও সিংহভাগেরই পেট চলে চেয়েচিন্তে। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা।
এখানে অধিকাংশ যৌন কর্মী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভুগছে আর্থিক অসচ্ছলতায় বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে। সরকারী অনেক সহযোগীতাও তাদের ভাগ্যে জুটছে না। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু ভাগ্যোন্নয়নে কেউই তাদের পাশে দাড়ায়নি। যৌনকর্মীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এমনাবস্থায় দাবী তুলেছেন বিকল্প কর্মস্থান ও সরকারীভাবে পুনর্বাসনেরও। আশার আলো হয়ে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা সিএসএস। এ সংস্থাটি যৌনকর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বিশেষ করে এইচ আইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোমুলক ব্যবস্থা সম্পর্কে কাজ করছে সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এসটিআই সম্পর্কিত পরিসেবা এবং স্কিনিং সুবিধা প্রদানের জন্য এ্যাডভোকেসি করা হয়। এইচ আইভি/এইডস সম্পর্কিত নেতিবাচক মানসিকতা দূরীকরণে এবং এর সংগে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সচেতনামুলক প্রচার প্রচারণার লক্ষ্যে ইনক্রিসড রেজিলিয়েন্স অব পার্সস অ্যাটরিজ অ্যাগেইনষ্ট এইচআইভি প্রুএডুকেশন অ্যান্ড এলিনিমেশন অব ষ্টিগমা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যৌনকর্মী খাদিজা আক্তার তুলি (ছদ্মনাম) বলেন, জীবনেতো শান্তি পেলামই না। মরেও শান্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। মৃত্যুর পর আমাদের লাশ নিয়েও জুট ঝামেলা পোহাতে হয়। মুসলিম মৃত ব্যক্তি জানাজা ও দাফন এবং সনাতন ধর্মের বেলায় কপালে জুটে শ্বশানে দাহ। আমাদের বেলায় কেন এই অবহেলা অবজ্ঞা। লাশ নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া। ইমাম সাহেবও জানাজা পড়ায়না। লাশ দাফনের অনুমতির অপেক্ষায় ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। অবশেষে বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কবরস্থান ফৌতি গোরস্থানে মাটিচাপা দেয় আমাদের। সরকারের কাছে দাবী আমাদের জন্য সরকারীভাবে আলাদা কবরস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
যৌনকর্মী সাথী (ছদ্মনাম) বলেন, সন্তানদের বাবার পরিচয় গোপন করে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। আমাদের অনেক ছেলে মেয়েরা এজন্য লেখাপড়াও করতে পারছে না। সরকারের কাছে দাবী আমাদের ছেলে/মেয়েরা যেন ভালো একটি স্কুলে পড়াশুনা করতে পারে, তার জন্য উন্নত মানের একটি স্কুলের ব্যবস্থা করা হোক। যৌনকর্মী রাহিলা (ছদ্মনাম) বলেন, আমাদের এখানে নিম্মমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা,অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, চিকিৎসার অভাব, ভেড়ীবাধের ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। নিজেদেরই পেটই চলেনা, উন্নত মানের স্যানিটেশন করবো কি ভাবে? সরকারের কাছে দাবী সরকারীভাবে এখানে ভালো মানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবী নদীর তীরে ব্লক দিয়ে টেকশই ভেড়ীবাধ নির্মান করা হোক। চিকিৎসার জন্য এখানে উন্নত মানের একটি হাসপাতাল তৈরীর দাবী জানাই।
স্থানিয় ইউপি সদস্য ফিরোজ খা বলেন, যৌনপল্লিটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে। তবে আমরা সরকার থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাই তা দেওয়ার চেষ্টা করি। যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে শুধু পুনর্বাসন করলে হবে না তাদের স্থায়ী ইনকামের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে পুনরায় এ ধরনের নেতিবাচক কাজ করা না লাগে।