
বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ (খুলনা) : শীত আসতেই খুলনার দাকোপে কুমড়ো বড়ি তৈরির হিড়িক পড়েছে। সম্পূর্ণ হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন এলাকার নারীরা অতি মজাদার এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করছেন। সব সবজির সাথে কুমড়ো বড়ি দিয়ে রান্না বাড়তি স্বাদের জুড়ি নেই। যে কারণে এ অঞ্চলে শীত মৌসুমে খুব জনপ্রিয় খাবার কুমড়ো বড়ির কদর বেড়ে যায়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভাবেও এ বড়ি বিক্রি করে অনেকে সংসারে আনছেন স্বচ্ছলতা।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে কুমড়ো বড়ি দেওয়ার এক অন্য রকম উৎসব শুরু হয়। বাণিজ্যিক ভাবে এ বড়ি তৈরি করা হয়। সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদানে তৈরি করা হয় এ কুমড়ো বড়ি। তবে বড়ি বানানো কাজ সহজ কোনো বিষয় নয়। এখানে রয়েছে একাধিক ধাপ। প্রথমে গাছ পাকা সাদা বর্ণের চাল কুমড়া কুচি কুচি করে কাটা হয়। অনেকে আবার কুড়ে কুড়েও তোলেন। তারপরে মাষ কলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে রেখে সেটা যাতায় পিষিয়ে নেওয়া হয়। পরে চাল কুমড়া আর ওই কলায়ের ডাল এক সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে মথে (মাখা) হয়। এরপর বাঁশের চাটাই এবং খেজুরের পাতার পাটির উপর কাপড় বিছিয়ে সূর্য্য উদয়ের সাথে সাথে তার উপরে ছোট ছোট করে লাইন দিয়ে বড়ি দেওয়া হয়। অনেকে আবার এতে চালের গুড়ো, মযদা, জিরা, কালো এল্যাচ, কালো জিরা ও বিভিন্ন রকম মসলা দিয়েও তৈরি করেন। দুই তিন দিন ভালো করে রোদে শুকালেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায় সুস্বাদু এই কুমড়ো বড়ি। আর পুরো শীতকাল জুড়েই বিভিন্ন সবজির সঙ্গে এ জনপ্রিয় বড়ি রান্না করে খেতে খুব পছন্দ এ অঞ্চলের মানুষের। আলু, বেগুন মাছ আর পালং শাকের সঙ্গে কুমড়ো বড়ি খেতে খুব ভালো লাগে। এ বছর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাট বাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। গত বছর মাস কালাইয়ের ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দাম ছিল। এ বছর এ ডাল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও কুমড়ো বড়ি তৈরির অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়ে গেছে। গত বছর সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং ভালো মানেরটা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এবার সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ৪০০ টাকা এবং ভালো মানের বড়ি ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে এ সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এ কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন।
পানখালী এলাকার গৃহবধু দেবলা রায় জানান, শীত কালে বিভিন্ন সবজির সাথে কুমড়ো বড়ি দিয়ে রান্না বাড়তি স্বাদের জুড়ি নেই। এটি তৈরি করতে প্রথমে পাকা চাল কুমড়া কুড়ে নেই। তারপর কাঁচা মাষ কলাইয়ের ডাল ধুয়ে ভিজিয়ে রেখে সেটা বেটে এক সাথে ভালো করে মাখাই। পরে দুই তিন দিন রোদে শুকালে খাওয়ার উপযুগি হয়ে যায়। তবে পুকুরের পানিতে ডাল ভালো করে ধুলে বড়িটার রং ধবধবে সাদা হয়। আর টিউবওয়েলের পানিতে ধুলে বড়িটা রং লালচে হয়ে যায়। আবার কুমড়া আর ডাল যদি ভালো করে মেশানো না হয় তাহলে সেটার স্বাদ কমে যায় এবং রান্না হতে দেরি হয়। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানের এ যুগেও আগের দিনের সবজিতে এ সুস্বাদু খাবারটি আজও টিকে রেখেছেন গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা।
চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবনানন্দ মন্ডল বলেন, শীতের সময়ে সব সবজির সাথে রান্না কুমড়ো বড়ি আলাদা বাড়তি স্বাদ আনে। যে কারণে এ অঞ্চলে শীত মৌসুমে কুমড়ো বড়ির খুব জনপ্রিয় হয় এবং কদর বেড়ে যায়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভাবেও এ বড়ি বিক্রি করে অনেকে লাভবান হয়।