জন্মভূমি রিপোর্ট
অতি সাধারণ একটি গ্রাম সাহেবেরআবাদ। দাকোপ উপজেলার ঢাকি-চুনকুড়ি নদীপাড়ের এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা নি¤œবিত্ত, সংখ্যালঘু, ছোট ছোট কৃষি জমির মালিক। গ্রামে উল্লেখযোগ্য উচ্চবিত্ত বা ধনী পরিবার নেই বললেই চলে। বড় হাঙ্গামা বা মারামারি বা ধংসাত্মক ঘটনার ইতিহাস গ্রামে নেই। শান্ত এই গ্রামের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে মাদক।
বেশ কিছু যুবক, কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গ্রামের মানুষ বলেছেন, এরা গাঁজা ও ইয়াবায় আসক্ত। দলে সব মিলে ১২ থেকে ২০ জন। তবে এদের কেউ কেউ গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। গ্রামের দুএকজন আগে থেকেই গাঁজায় অভ্যস্ত ছিলেন।
গ্রামের মানুষ কী করবে বুঝে উঠতে পারছেন না। এই দলটির সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগ, ওঠাবসা আছে। এদের দু-একজন স্থানীয় পোদ্দারগঞ্জ বাজারে দোকানো বসানো নিয়ে প্রভাব খাটায়। এ বছর অন্যের জমিতে তরমুজ চাষ করেও জমির মালিককে প্রাপ্য টাকা দেয়নি এমন অভিযোগও আছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা গ্রামে আসলে এদের দেখা যায় কর্মকর্তাদের পেছন পেছন। তাই এদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কারও কাছে অভিযোগ করতে সাহস পায় না।
নাম প্রকাশিত হলে প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে এমন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা এই প্রতিনিধিকে বলেন, মাদকচক্র নিজরাতো মাদক গ্রহণ করেই, তারা যুবক শ্রেণিকে টার্গেট করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তাদের মাধ্যমে পুরো উপজেলাজুড়ে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। মাদক বিবিকিনির ব্যাপারে তারা খুবই কৌশল অবলম্বন করছে। বিকাশের টাকা পরিশোধ করছে। বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে মাদক ডেলিভারি হচ্ছে। ফলে প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেনা। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতার ছেলেদের ছত্রছায়ায় ইয়াবা, ফেসসিডিল ও গাঁজার ব্যবসা চলছে। এরা এতটাই ক্ষমতাশালী যে এদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস কারো নেই। যদি কেউ কথা বলেন তার প্রাণনাশের শঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, আমার থানা এলাকায় মাদকের পরিস্থিতি অনেকটাই সন্তোষজনক। পুলিশ এব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও মাদকের ব্যাপারে কোন আপোষ করছেন না। নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় এখন মাদক উদ্ধার হচ্ছে বেশি। তাই মনে হচ্ছে মাদকের প্রসার বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আগে পরিস্থিতি একটু অন্যরকম থাকলেও বর্তমানে মাদকের ব্যপারে স্থানীয় কোন রাজনৈতিক চাপ নেই।
॥ যেখানে আড্ডা বসে ॥
নদীর পাড় নিয়ে পোদ্দারগঞ্জ বাজার থেকে (উত্তর থেকে দক্ষিণে) দাকোপ হাইস্কুল পর্যন্ত সাহেবেরআবাদ গ্রাম। পাড়া মূলত তিনটে: পোদ্দারগঞ্জ, ঝড়খালি ডাঙা ও দক্ষিণ ডাঙা। তিন পাড়াতেই কম বেশি মাদকের আড্ডা বা মাদক কেনাবেচা হয়। তবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ঝড়খালিডাঙায়।
ঝড়খালি ডাঙার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাড়ার তিনটি জায়গায় এরা নিয়মিত গাঁজা ও ইয়াবার আড্ডা বসায়। প্রথমত দাকোপ লঞ্চঘাট। লঞ্জঘাটের যাত্রী ছাউনিতে প্রতিদিন বিকেলে তাসের আড্ডা বসে। সন্ধ্যা নামতেই তাসের আড্ডা মাদকের আড্ডায় পরিণত হয়। লঞ্চঘাটে তিনটি মুদি ও একটি চায়ের দোকান আছে, এরা প্রতিদিনের ঘটনার নিরব সাক্ষী।
লঞ্চঘাটের কয়েকশ’ গজ পূর্বপাশে আছে টেলিফোন টাওয়ার, এলাকার সবচেয়ে পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাহেবেরআবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিরাপদ স্থান হিসেবে মাদকসেবিরা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করছে। তবে সম্প্রতি ছোট ও বড়দের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুল আর কেউ যায় না।
এলাকার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, মটর সাইকেল চালিয়ে উপজেলা সদর ও কালিনগর এলাকা থেকে নিয়মিত মানুষ এখানে আসা-যাওয়া করে। এরা কেউ মাদক খেতে আসে, কেউ বিক্রি করতে। নদী পাড়ের রাস্তায় ইট তোলা হয়েছে নতুন পাকা সড়ক করার জন্য। এখন বর্ষাকাল, মটর সাইকেল চলে না। তাই রাতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা আসছে সাহেবেরআবাদে। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকে বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতার ছেলে নিয়মিত এই পাড়ায় আসেন এবং গভীর রাতে চলে যান। তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই গ্রামে এসে মাদক বিক্রি করেন। মাদক গ্রহীতাদের অধিকাংশই স্কুলের গ-ী পার হয়নি। এদের কারণে গ্রামে খেলাধূলা বন্ধ হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ১৫ আগস্ট দাকোপ থানাধীন পানখালী ১ নং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বাবু মেম্বর সুইচ গেইটের বিপরীতে সুশীল রায়ের কাঁকড়ার ডিপোর সামনে পাকা রাস্তার উপর থেকে পানখালী ১ নং ওয়ার্ডের আমজাদ শেখের ছেলে মোঃ ইমদাদুল শেখ (৪৫) ও বড় খলিসা এলাকার তুষার রায়ের ছেলে সৌরভ রায়কে (২৫) গাঁজাসহ গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
দাকোপে গাঁজা-ইয়াবার থাবা : গ্রামের মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে মাদকাসক্তরা
Leave a comment