বিধান চন্দ্র ঘোষ দাকোপ (খুলনা) : সনাতন হিন্দুধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজার আর মাত্র ৫দিন বাকি। সারা দেশের ন্যায় খুলনার দাকোপে এ বছর ৭৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয়া দূর্গা পূজা উদ্যাপনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তাই দূর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে প্রতিমা তৈরিতে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা ভাস্কাররা। এদিকে দূর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী এসব সার্বজনীন মন্ডপ তৈরি করে পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ প্রায় শেষ। অধিকাংশ মন্ডপে ভাস্কাররা শুরু করেছেন রং, তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ। এতে কৃত্রিম জীবন পাচ্ছেন দেবী দূর্গা, শিব, লক্ষী, সরস্বতি, কার্তিক, গনেশ ও অসুর প্রতিমা। এরপর কোন কোন প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গয়না। এ ছাড়া ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি, আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মন্ডপগুলো। পাশাপাশি আলোক সজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মন্ডপ ও তার আশে পাশে সাজ সজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সাথে সংশ্লিষ্টরা। সাথে সাথে অন্যরাও পূজার কেনাকাটা করতে শুরু করেছেন।
উপজেলার পানখালী এলাকার রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, মহা চন্ডীতে উল্লেখ আছে ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সাথে যুদ্ধে রত হন। রাম চন্দ্র পাপের বিনাশের লক্ষে দেবী আদ্ধাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সিতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে নিহত করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠি তিথীতে বোধন তলায় মঙ্গল ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দূর্গা দেবীর এ উৎসব শুরু হবে। আর আগামী ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মহাবিজয় দশমীতে দেবী দূর্গা প্রতিমা বির্ষজনে এ উৎসবের সমাপ্তী ঘটবে। এ বছর দেবী দূর্গার আগমন হবে হাতিতে চড়ে। আর প্রস্তান হবে দোলায় চড়ে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
বটবুনিয়া এলাকার ভাস্কার প্রলয় সরকার জানান, প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ শেষ এখন চলছে রং তুলি দিয়ে সাজ সজ্জার কাজ। এবার তাদের ৪ জনের টিম মিলে বিভিন্ন এলাকায় ৪টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। এতে তারা প্রায় ৯৬ হাজার টাকা পাবেন এবং বিভিন্ন মালামালে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান।
থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাটিলিয়ান আনসার, সাধারণ আনসারসহ পৃথক ২টি মোবাইল টিমের সদস্যরা মোতায়ন থাকবে। এ ছাড়াও প্রতি ইউনিয়নে চেক পোস্ট এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
এব্যাপারে উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার রায় ও চালনা পৌরসভা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অতিন মন্ডল এ প্রতিবেদকে জানান, এ বছর মোট ৭৬টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ২টি পূজা ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রত্যেক মন্ডপ কমিটিকে বলেনটিয়ার টিম রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মন্দিরের বাহিরে সকল প্রকার আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি থাকবে। সকল অপশক্তি রুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রেখে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালন করবেন বলে তারা জানান।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত