
বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ : তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনার দাকোপের নিম্নবিত্ত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও রাত হতেই নেমে আসছে ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা। এমনকি মাঝে মধ্যে সূর্যের দেখাও মিলছে না। ফলে শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। হাড় কাঁপানো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। বিভিন্ন হাট-বাজারে করিগররা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক তৈরি করে মজুদও করছেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বটবুনিয়া বাজার, কালিনগর বাজার, নলিয়ান বাজার, বাজুয়া বাজার ও লাউডোব বাজারে লেপ-তোষক তৈরির জন্যে প্রায় ১৫/১৬টি দোকান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া উপজেলা সদর চালনা পৌর বাজারেও আরও ৫/৭টি দোকান রয়েছে। তা ছাড়া এসময় বাহিরের কারিগররাও বাড়িতে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য লেপ-তোষক তৈরি করতে আসছেন। এদিকে শীতের আগমনে কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী বাই সাইকেল ও ভ্যান গাড়ীতে করে গ্রামে গ্রামে লেপ-তোষক ফেরী করে বিক্রি করছেন। এমনকি ফুটপথেও গরম কাপড় বিক্রি ধুম পড়েছে। এই উপজেলায় সাধারনত অগ্রহায়ন মাসের শুরুতে শীতের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। ইতো মধ্যে ব্যাপক শীত পড়তে শুরু করেছে। রাত ৮টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত বর্তমানে কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার না করে রাতে কারোও ঘুমানোর উপায় নেই। তাই দিন যতই অতি বাহিত হচ্ছে শীতের তীব্রতা ততই বাড়ছে। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত প্রচন্ড কুয়াশা ঝড়ছে। এলকার অবস্তা সম্পন্ন লোকজন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য লেপ-তোষক সংগ্রহ করছেন। অপরদিকে নিন্ম আয়ের পরিবারের সদস্যদের লেপ-তোষকের সাধ থাকলেও অনেকের সাধ্য না থাকায় তাদের পরিবারের মহিলারা পুরানো শাড়ি, লুঈি ও অন্যানো কাপড় এবং রঙ-বেরঙের সুতা দিয়ে ক্যাথা তৈরি করে চলেছেন।
পানখালী এলাকার সনজিত রায় বলেন, এত ঠান্ডা পড়ছে যে সকালে কাজ করা যায় না। হাত-পা বরফ হয়ে যায়। আমরা গরিব মানুষগুলো খুব কষ্টে আছি। ঠন্ডায় দিনমজুরের কাজও করতে পারছি না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রচন্ড শীতে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। মটর সাইকেল চালক ফল্গুনি হালদার, ভ্যান চালক মহানন্দ সরকার একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
চালনা বাজার লঞ্চঘাট এলাকার কারিগর ও দোকানদার নূর মোহাম্মদ জানান, বর্তমানে শীত একটু বেশী পড়ায় প্রতিদিন ৫/৭টি করে লেপ-তোষক বিক্রি করছেন। কিন্তু বর্তমানে মালামালের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে লাভ অনেক কম হচ্ছে। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের গরিব মানুষরা লেপ-তোষক ক্রয়ে করছেন বেশি। আর অবস্তা সম্পন্ন লোকজন বিশির ভাগ ভালো ভালো কম্বল নিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমত হোসেন বলেন, তিনি প্রতি রাতে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করছেন। এ ছাড়া যারা অফিসে এসে শীতবস্ত্র চাচ্ছেন তাদেরও দিচ্ছেন। শীতবস্ত্র দেওয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।