পজেশন বিক্রি করে অবৈধ দখলদাররা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ : খুলনার দাকোপে বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র সরকারি জায়গায় গড়ে উঠছে দ্বিতল ভবনের বসত বাড়ি ও দোকান ঘরসহ পাকা স্থাপনা। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘ দিন যাবৎ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও পেরিফেরি জায়গা দখল করে প্রতিনিয়ত এসব স্থাপনা গড়ে উঠলেও প্রশাসন রয়েছেন নীরব। পাশাপাশি ফুটপাতও দখলের হিড়িক পড়েছে। এতে সরকার একদিকে হাজার হাজার টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী এসব সম্পত্তির পজেশন বিক্রি করে অবৈধ দখলদাররা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয় গঠিত বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূল ঘেঁষা এই উপজেলা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১, ৩২ ও ৩৩ পৃথক এই তিনটি পোল্ডারেও বিভক্ত। এসব পোল্ডারে উপজেলা সদর চালনা বাজার, কালিনগর বাজার, বাজুয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি ঐতিয্যবাহী বাজার রয়েছে। এছাড়া আরো প্রায় অর্ধ শতাধিক স্থানে রয়েছে ছোট ছোট বাজার। কয়েকটি বাজারে সরকারি পেরিফেরি ভূক্ত সম্পত্তিও রয়েছে। এসব বাজার এলাকায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও পেরিফেরি ভূক্ত জায়গা দখল করে অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছে দ্বিতল ভবনের বসত বাড়ি, দোকান ঘরসহ বিভিন্ন পাকা স্থাপনা। পাশাপাশি ওয়াপদা রাস্তার ফুটপাতও দখল করে তৈরী করা হচ্ছে এসব স্থাপনার বারান্দা। অবৈধ এ দখল প্রতিযোগিতায় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও আ‘লীগের নেতা কর্মিরাও জড়িত। ফলে জনসাধারনের চলাচলের পথও দিন দিন সরু হয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে আবার এসব সরকারী সম্পত্তির পজেশন বিক্রি করে অবৈধ এ দখলদাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এসব অধিকাংশ সম্পত্তি যৌথ বাহিনীর উদ্যোগে অবৈধ দখল মুক্ত হলেও পূনরায় আবার ওই দখলদারদের দখলে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারী সম্পত্তি এভাবে দখলের প্রতিযোগীতা চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নীরব ভুমিকায় রয়েছে বলে এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ। সরকার একসনা লিজ দিলে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত না হয়ে বরং আয় হতো বলে ওই মহলটি মনে করেন। একই ভাবে সরকারী পেরিফেরি ও বিভিন্ন খালগুলো দখল করে অনুরুপ স্থাপনা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতি মধ্যে বাজুয়া ও লাউডোব বাজার এলাকায় অবৈধ দখলদাররা বেশ কয়েকটি পজেশন বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর বাজুয়া এলাকায় সদ্য গজিয়ে ওটা কতিপয় নেতা আর্থিক চুক্তিতে বিভিন্ন দোহাই দিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মানে ও পজেশন বিক্রিতে দখলদারদের সহযোগিতা করছে বলে ব্যাপক গুণজন রয়েছে।
জয়নগর এলাকার হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, অনেক আগে থেকে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের পাশে পাউবোর সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলে ছিলো। কিন্তু কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ-১ (সিইআইপি-১) আওতায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মান হয়েছে। এ সময়ে ওয়াপদার পাশে যতো দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অবৈধ দখলদার ছিলো তাদের প্রত্যেকে আর কখনো ওই জায়গা দখল করবে না মর্মে ষ্ট্যাম্পে অঙ্গিকার নামা দিয়ে জেলা প্রশাসকের জমি অধিগ্রহন শাখা থেকে ক্ষতিপূরন বাবদ মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করে সকল স্থাপনা সরিয়ে নেয়। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কালিনগর বাজারসহ ৩২ ও ৩৩ পোল্ডারের বিভিন্ন এলাকায় পূনরায় আবার ওয়াপদা বেড়িবাঁধের শ্লোবে জোর পূর্বক পজেশন দখল করে দোকান ঘরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মান করছে ওই দখলদাররা। ৩১ নম্বর পোল্ডারেও একই অবস্থা বিরাজমান। এছাড়া চালনা, বাজুয়া ও কালিনগর বাজারে সরকারি পেরিফেরি ভূক্ত সম্পত্তিতেও একই অবস্থা। তিনি অভিযোগ করে বলেন স্থাপনা নির্মানের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে শুধুমাত্র নোটিশ দিয়েই দায় এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। দখলদাররা সেই নোটিশ অমান্য করে নির্মান কাজ চালিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মাঝে মধ্যে আবার এই পজেশন বিক্রি করে দখলদাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সরকার যদি একসনা লিজ দিতো তাহলে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হতো এবং তা দিয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করা যেতো বলে তিনি মনে করেন।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ শেষ হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট জুবায়ের জাহাঙ্গীর‘র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেরিফেরি ভূক্ত জায়গায় কোন পাকা স্থাপনা গড়ে তোলা যাবে না। আমি এখনই বানিশান্তা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।