বিধান চন্দ্র ঘোষ দাকোপ (খুলনা) : খুলনার দাকোপে গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তবুও সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো চাষি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় মোট চাষ যোগ্য জমি রয়েছে ২০ হাজার ৮৮৩ হেক্টর। এর মধ্যে এ বছর তরমুজ চাষ হয়েছে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর তরমুজ চাষ হয়েছিলো ৫ হাজার ৭০০ হেক্টরে। এ ছাড়া বোরো ধান ২৯৩ হেক্টর, সূর্য্যমুখি ৪০ ভূট্টা ২০ হেক্টর, বাঙি ৪৫ হেক্টর, গম ২ হেক্টর, মুগ ডাল ১৭ হেক্টর, তিল ১০ হেক্টর ও ৪০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু পানির উৎস সরকারি খাস খাল, জলাশয়গুলোর গভীরতা সংকটে এবং প্রচন্ড খরার কারণে পুকুরগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তরমুজ ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না এলাকার কৃষকরা। সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমনের পর রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় তরমুজ চাষে। ১ বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ রোপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর বিক্রি হয় নিম্নে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি। তবে এ বছর সেচের পানির অভাবে খরচ হতে পারে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তুমুজ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ জমিতে তরমুজ গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। গাছে ফুল ও ফল আসা শুরু করেছে। কিছু ক্ষেতে আবার তরমুজ বড় হয়ে উঠেছে। অনেকে আবার বিক্রিও শুরু করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেতে সার ও কীটনাষক ছিটানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষরা। তবে প্রচন্ড খরার কারণে মাঠের মধ্যে খাল বিলগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ক্ষেতে সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে অনেকে মাঠের ছোট ছোট কুয়ো থেকে ক্ষেতে সেচ দিলেও সে সব পানির উৎসগুলো এখন শুকিয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষক পাম্প ও লম্বা পাইপ দিয়ে দুরের খাল থেকে সেচ দিলেও সে সব খালে এখন আর পানি নেই বললেই চলে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন।
চুনকুড়ি এলাকার কৃষক পংকোজ কুমার রায় বলেন, তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে। এ বছর তিনি ২২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। গাছে ফলও ধরেছে ভালো। প্রথম দিকে তিনি পাশর্^বর্তী বাজুয়া নদী থেকে তরমুজ ক্ষেতে সেচ দিয়েছেন। এখন সেখানে পানি শুকিয়ে গেছে। তা ছাড়া খরার কারণে আশে পাশের খালগুলোর পানিও সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। ফলে যাদের পুকুরে পানি আছে সেখান থেকে প্রতি ঘন্টা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা চুক্তিতে সেচ দিয়ে কোন রকমে গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেচের পানির অভাবে ফল ভালো বড় হবে না, গাছও মরে যেতে পারে। এতে এবার বিঘা প্রতি ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ বাড়ার কারণে তার ব্যাপক লোকসান হতে পারে। আর লোকসান হলে ধার দেনা ও ঋণ শোধ করতে না পারলে তিনি পথে বসবেন বলে জানান। তার মতো এলাকার ৭০ ভাগ কৃষকের একই অবস্থা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য কৃষক জীবনানন্দ মন্ডল জানান, উপজেলার সকল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ সরকারি খাস খাল, জলাশয়গুলো অবৈধ দখলদার ও ইজারাদাররা ঘন ঘন টোনাজাল, নেটপাটা দেওয়ার কারণে পলি পড়ে গভিরতা কমে যাওয়ায় খাল ও ব্যক্তিগত পুকুরগুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে তরমুজ ক্ষেতের সেচের পানির তীব্র সংকট চলছে। সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো তরমুজ চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন অনেক স্থানে সেচের পানি নিয়ে ঝগড়া বিবাদও লেগে আছে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, মাঠের খাল ও জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে গভিরতা কমে যাওয়ায় পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানিও প্রচন্ড লবণ থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। গত বছর কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় ১৫০টি মিনি পুকুর, ১টি বড় কেনাল ৫০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৪০টি খাল খননের জন্য তালিকাসহ মন্ত্রনালয় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ে ক্রমে সব খালগুলো খনন করতে পারলে কৃষকদের সেচের পানি সংকট কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করেন তিনি।
দাকোপে সেচ সংকটে তরমুজ চাষ ব্যাহত

Leave a comment