অগ্রিম দিতে হয়েছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা
ভোটারদের সহায়তার জন্য ১টা ভ্যান থাকার নিয়ম থাকলেও অনেক কেন্দ্রে ছিল না
অফিসের প্রিন্টার ক্রয় ও দুর্গা পূজায়ও টাকা নেওয়ার অভিযোগ
জন্মভূমি ডেস্ক : সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় আনসার সদস্য নিয়োগে লাখ-লাখ টাকা ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুনাহার খানম দল নেতাদের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা আনসার-ভিডিপি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মিলন মিয়াও ঘুষ-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটাদের সহায়তার জন্য কাগজে কলমে ১টি করে ভ্যান বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে ছিল না। এমনকি আনসার দলনেতারাই জানতেন না, ভোট কেন্দ্রে ভ্যানের বরাদ্দকৃত ১ হাজার টাকার কথা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভ্যান না দিয়ে এ টাকাও আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুনাহার খানম এ টাকা হাতে গোনা কয়েক জনকে ৫ থেকে ৭শ’ টাকা করে দিয়েছেন। এমনকি টাকা দিতে না পারায় নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অনেক আনসার সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগে দুর্গা পূজায়ও আনসার ডিউটিতে অফিসের প্রিন্ট্রার মেশিন ক্রয় বাবদ ৪০৮ জন আনসার সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দিঘলিয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের দায়িত্ব (ডিউটি) গ্রহণ করার আগেই দলনেতার মাধ্যমে অগ্রিম ১ হাজার থেকে ৮শ’ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষের বিনিময়ে প্রতি নির্বাচন কেন্দ্রে আনসার সদস্যদের নিয়োগ হয়েছে। জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নামে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা এ টাকা সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগী আনসার সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এর মূলে রয়েছেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা। এই প্রথা দীর্ঘদিন থেকে চলে এলেও ভয়ে আনসার সদস্যরা মুখ খুলতে চান না, পরবর্তীতে আবার ডিউটি না পাবার আশংকায়। নির্বাচনের পর এখন ধীরে ধীরে বিষয়টি প্রকাশ হতে শুরু করেছে, আনসার সদস্যরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তবে আনসার সদস্যদের যাতায়াত ও খাবার বাবদ ৭শ’ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ৪৪০ টাকা হাতে পেয়েছেন, এখানেও অর্থ লুট করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্যরা কাগজ কলমে ৬দিন (৩ জানুয়ারী থেকে ৮ জানুয়ারি) থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ডিউটি করছে ১দিন অর্থাৎ ভোটের দিন ৭ জানুয়ারী। এ জন্য উপজেলা কমান্ডার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনসার-ভিডিপি সদস্যদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আনসার সদস্যদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নামে এ টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে আনসার সদস্যদের অভিযোগ । এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের দায়িত্ব দিতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে।
উপজেলা আনসার-ভিডিপি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৪৯টি নির্বাচনী প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আটজন পুরুষ, চারজন নারীসহ ১২ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। সে হিসাবে উপজেলায় মোট আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন ৩৯২জন পুরুষ ও ১৯৬জন মহিলা। এর মধ্যে রয়েছে ভাতাভোগী ২৩ জন। গত ৩ জানুয়ারী থেকে ৮ জানুয়ারী পর্যন্ত ছয় দিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও আনসার সদস্যরা ডিউটি করেছেন শুধু একদিন ৭ জানুয়ারী। ছয় দিনের খাবার ও যাতায়াতসহ দলনেতাদের জন্য ৭ হাজার টাকা এবং সদস্যদের জন্য ৬ হাজার ৭শ’ টাকা করে বরাদ্দ ছিল।
পরবর্তীতে আবার ডিউটি না পাবার আশংকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নামে উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুনাহার খানম সদস্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে বলেন। এর আগেও দুর্গা পূজায় অফিসের প্রিন্ট্রার মেশিন ক্রয় বাবদ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে জন প্রতি ১শ’ টাকা আদায় করেন মিলন। অনিয়মের ব্যাপারে কথা বললে পরে আর আমরা ডিউটি পাবো না এই ভয়ে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাই। প্রতিটি কাজে আনসার নিয়োগের সময় উপজেলা অফিসে আগে থেকেই দলনেতার মাধ্যমে টাকা নিয়ে থাকে।
দলনেতারা বলেন, আমরা কিছু খরচের জন্য রাখব, বাকি টাকা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দিতে হবে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের টাকা দিতে না হলে আমরা টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ পেতাম না।
উপজেলা আনসার-ভিডিপি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মিলন মিয়া ঘুষ- বানিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সব কিছুই উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুনাহার খানম ম্যাডাম জানেন।
দিঘলিয়া উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা, শামসুনাহার খানম বলেন, আমি যেটা খবর পেয়েছি দলনেতারা অনেক দিন যাবৎ আসে যায় সে হিসাবে খরচের জন্য কিছু নিতে পারে। নিয়েছে কিনা সেটা তাদের ব্যাপার। নিলেও ১শ’ টাকার বেশি না। আমি আনসার সদ্যদের বলে দিয়েছি এখানে কোন টাকা লাগে না, বার বার বলা হয়েছে, তোমরা যদি কিছু নিয়ে থাক তাহলে খরচ বাবদ নিয়ো, এমন কিছু করোনা সদস্যদের গলা কাটা না যায়। ভোটাদের সহায়তার জন্য ১টি করে ভ্যান গাড়ীর বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার টাকা। খাবার ও যাতায়াত বাবদ ৫শ’ টাকা দিয়েছে। আর দলনেতার কাছে প্রতি কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার টাকা করে ভ্যান ভাড়া বাবদ দিয়েছি। তবে, এর আগে প্রিন্ট মেশিন তিনি নিজের টাকায় কিনেছেন বলেও দাবি করেন।
খুলনা জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ সাইফুদ্দিন বলেন, নিয়োগ পেতে অর্থ নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সঠিক তথ্য পেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সকল ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলে মিটিং এ আছেন বলে এড়িয়ে যান তিনি।