
মুহাইমিন সৌরভ: দীর্ঘ তাপপ্রবাহে খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে সংকট বাড়ছে। পানির কষ্টে ভুগছে মানুষ। পানির উৎস সমূহ নষ্ট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষগুলো। সংকট উত্তরণে স্থানীয় জলাশয় সংরক্ষন ও বেশি বেশি গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে তাপমাত্রার পরিমান সবথেকে বেশি থাকে। এবছর খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমান মাত্র সাত মিলিমিটার। অথচ ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলেসিয়াস। আর বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিলো ৩৪ মিলিমিটার। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়লেও তার স্থায়ীত্ব ছিলো কম। ঠিক তেমনি ২০০০ সালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ওই বছর এপ্রিলে বৃষ্টিপাত হয়েছিলো প্রায় ৭০ মিলিমিটার। এমনকি ২০১৪ সালে তাপমাত্রার পরিমান ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে উঠলেও বৃষ্টিপাত হয়েছিলো ৫০ মিলিমিটার। বিগত সময়ে শুষ্ক মৌসুমে তাপমাত্রা বাড়লেও বৃষ্টিপাতের পরিমানও বেশি ছিলো। এতে মানুষের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রার পরমিান একদিকে বাড়ছে অন্যদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমান কমছে। ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গরমের প্রভাব থাকছে প্রকৃতিতে।
সূত্রটি জানিয়েছে, খুলনার কয়রা উপজেলা একেবারে সুন্দরবনের পাশ ঘেষে অবস্থিত। ফলে এই উপজেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা নয়। তবে গেল কয়েক বছরের রেকর্ড অনুযায়ী এ উপজেলাতেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এপ্রিল মাসের বেশিরভাগ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৯ ডিগ্রী সেলিসিয়াস। এ উপজেলায় গরম মৌসুমে তীব্র পানির সংকট তৈরি হয়েছে। সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় মানুষদের। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করে শুষ্ক মৌসুমে সেই পানি পান করে সাধারণ মানুষ। এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমান একেবারেই কম হওয়ায় সংরক্ষন করা পানিতে টান পড়তে শুরু করেছে।
কয়রা উপজেলার কালনা গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টির সময় পানি ধরে রাখি। যাতে গরমের সময়ে পান করতে পারি। এছাড়া কমবেশি সারা বছরই বৃষ্টি হয়। ফলে সংরক্ষন করা পানিতে টান পড়ে না। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খাবার পানি নিয়ে সংকটে পড়তে হয়েছে। বোতলের পানি কিনে পান করতে হচ্ছে।
দাকোপ উপজলোতেও পানির মারাত্বক সংকট তৈরি হয়েছে। কালাবগি এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, আমরা পানি পান করা কমিয়ে দিয়েছি। দিন পার করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই পান করি। বর্ষার পর থেকে সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। ফলে পানি সংরক্ষন করা যায়নি। সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার রিজার্ভার স্টেশনগুলোতেও পানি সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন। যে তাপ সূর্য থেকে বিকিরিত হয়ে পৃথিবীতে আসে নদী নালা খাল ও গাছপালা সেই তাপ শোষন করে পরিবেশকে ঠান্ডা করে। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যহারে কাছ কাটা ও জলাশয় ভরাট করার ফলে তাপ শোষনের পরিস্থিতি কমছে। যেমন একটি বহুতল ভবনে সূর্যের আলো পড়লে সেই ভবন থেকে তাপ বিকিরিত হয়ে চারপাশের পরিবেশকে উত্তপ্ত করছে। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপকহারে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।