নড়াইলে রুমকি নামে মহিলার বিরুদ্ধে সনদ ও বয়স জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। আর এ বয়স জালিয়াতির কারণে তার প্রথম সন্তানের সাথে তার বয়সের ব্যবধান দাড়িয়েছে মাত্র ২ বছর। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ২বছর বয়সে সন্তান প্রসব কিভাবে সম্ভব? সনদ ও বয়স জালিয়াতি করা ওই মহিলার নাম রুমকি সিদ্দিকা। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের চরবিলা গ্রামের হামিমুর রহমান মন্ডলের স্ত্রী। সম্প্রতি রুমকি সিদ্দিকা শাহাবাদ মাজিদীয়া কামিল মাদরাসার অফিস সহকারি পদে চাকুরীর আবেদন করলে তার এ জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার চরবিলা গ্রামের ভোটার এলাকা কোড ০৬৬৪ এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকার সিরিয়াল নং ৪৫৮ এ মোঃ হামিমুর রহমান মন্ডল এর স্ত্রী মিসেস রুমকী সিদ্দিকার জন্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে ১৯৭৯ ইং সালের ২০ নভেম্বর। যার ভোটার নং-৬৫০৬৬৪১৭৪৯২৪। অথচ রুমকী সিদ্দিকার বাবার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়া পৌরসভা হতে নেয়া জন্ম সনদে এবং শিক্ষাবোর্ড হতে যে সনদ সংগ্রহ করেছেন তাতে জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন ১৯৯৫ইং সালের ১ জুলাই। রুমকী সিদ্দিকার জ্যেষ্ঠ কন্যা সামিয়া ২০২০ ইং সালে শাহাবাদ মাজিদীয়া কামিল মাদরাসা হতে কামিল পরীক্ষা দিয়েছে। তার জন্ম তারিখ ১৯৯৭ ইং সালের ৭ জুন। রুমকী সিদ্দীকা অফিস সহকারি পদে চাকুরীর জন্য যে কাগজপত্রাদি জমা দিয়েছেন সেই তথ্য অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ কন্যা সামিয়ার থেকে তিনি মাত্র ২ বছরের বড়। তা-হলে কি তিনি মাত্র ২ বছরে প্রথম সন্তান প্রসব করেছেন ? মা ও মেয়ের বয়স প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় রুমকি সিদ্দীকার প্রকৃত বয়স নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার ভোটার তালিকায় থাকা বয়স সঠিক ও যৌক্তিক মনে করে অফিস সহকারি পদে প্রতিদ্ব›দ্বী একাধিক প্রার্থী তার বিরূদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকরা গ্রামে রুমকি সিদ্দিকার বাবার বাড়ি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন অবস্থাতেই রুমকি সিদ্দিকার বয়স ১৯৯৫ ইং সাল হওয়ার সুযোগ নাই।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, হামির মন্ডল কৌশল করে শাহাবাদ মাজিদীয়া কামিল মাদরাসার জিবি’র সদস্য হয়ে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রী রুমকিকে অফিস সহকারি পদে চাকুরী দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। আর এই চাকুরী নেয়ার জন্য তারা বয়স জালিয়াতির মত জঘন্য কাজ করেছেন।
এ ব্যাপারে হামির মন্ডলের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি স্ত্রী রুমকি সিদ্দীকার চাকুরীর জন্য কোন চাপ সৃষ্টি করছেন না। তার স্ত্রী নিয়মানুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করেছেন। তার স্ত্রী রুমকী সিদ্দীকা পরবর্তীতে এসে বয়স কম দিয়ে লেখাপড়া করেছে। সেই কারণে জন্ম সনদ ও শিক্ষাগত সনদে তার বয়স কম আছে। এ সময় তিনি আরোও বলেন, বয়স দুই রকম হলেও এটা কোন ব্যাপার না। লেখাপড়ার বয়স আলাদা হতেই পারে।
এ ব্যাপারে শাহাবাদ মাজিদীয়া কামিল মাদারাসার অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসাইন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাচাই বাছাই কমিটি প্রত্যেকের আবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি পর্যবেক্ষণ করবেন। কোন অসামঞ্জস্য কোন কিছু পেলে এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নিবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার ছাইয়েদুর রহমান বলেন, এসএসসি বা দাখিল বা সমমান পাসের সনদের বয়সটাই মূলত গ্রহণযোগ্য। কিন্তু কারো সন্তানের সাথে যদি নিজের বয়স একই রকম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তো অন্য রকম বিতর্কের ব্যাপার। এ রকম কোন কিছু হলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে।