By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: দুর্গাপূজা কি, কেন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > দুর্গাপূজা কি, কেন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

দুর্গাপূজা কি, কেন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

Last updated: 2025/10/01 at 5:51 PM
Asif Kabir 19 minutes ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দূর্গতি নাশ বা সংকট মোচন করেন ব’লেই তিনি দুর্গা। কিন্তু এই দুর্গা আসলে কে ? সাধারণভাবে আমরা জানি, অসুররা যখন দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ দখল করেছিলো, তখন সকল দেবতার মিলিত শক্তিতে দেবী দুর্গার উৎপত্তি হয় এবং এই দুর্গা অসুরদের পরাজিত করে দেবতাদের বাসস্থান, স্বর্গ উদ্ধার করে দেয়। তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, সকল দেবতার মিলিত শক্তিতে সৃষ্ট নারীরূপী দুর্গা যদি একা সকল অসুরকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে সকল দেবতা মিলে তা করতে পারলো না কেনো ? এখানে শক্তি তো সমান?
এখন নেট-ফেসুবক ও প্রশ্নের দুনিয়া, তাই বিভিন্ন ধর্মের বিধি বিধান নিয়ে অনলাইন ছাড়াও অফলাইনে লোকজন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে, এর মধ্যে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে অন্যদের আক্রমনই বেশি, তাই হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষয় ঠেকাতে এবং হিন্দুধর্ম সম্পর্কে হিন্দুদের আত্মবিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে ও ফিরিয়ে আনতে, হিন্দুধর্মের পালনীয় প্রথার গূঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে সকল কিছু, সকল হিন্দুর জানা একান্ত জরুরী, তা না হলে অন্য ধর্মের আগ্রাসী আক্রমনে হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই আপনাদের জন্য দুর্গাপূজা উপলক্ষে, দেবী দুর্গা এবং এ প্রসঙ্গে অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আমার এই নিবেদন।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন পরমব্রহ্ম, যাকে শুধু ‘ব্রহ্ম’ও বলা হয়। এই ব্রহ্ম তিনটি রূপে তার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন- ব্রহ্মা রূপে সৃষ্টি, বিষ্ণু রূপে পালন এবং মহাদেব বা শিব রূপে ধ্বংস। কিন্তু অজ্ঞতা ও বিকৃত ব্যাখ্যার কারণে আমরা এতদিন অনেকেই মনে করেছি বা জেনে এসেছি যে, ব্রহ্মের তিনটি রূপ বা ব্রহ্ম তিনভাগে বিভক্ত, যথা- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। তাই আমরা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরকে আলাদা আলাদা তিনটি সত্ত্বা বিবেচনা করেছি এবং তাদের আলাদা মূর্তি প্রথমে কল্পনা ও পরে তৈরি করেছি; শুধু তাই নয়, তাদের প্রত্যকের স্ত্রী সৃষ্টি করেছি, পরে বহু দেবতার জন্ম দিয়েছি, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সেরকম কিছু নয়।
একজন লেখক যখন কল্পনা করে কোনো গল্প বা উপন্যাস লিখে, তখন লেখক কিন্তু একাই সমস্ত চরিত্র সৃষ্টি করে। এর মানে হলো নায়কও লেথক, নায়িকাও লেখক, নায়ক-নায়িকার পিতা-মাতাও লেখক আবার ভিলেন এবং সকল পার্শ্ব চরিত্রও লেখক। অর্থাৎ লেখক একাই ঐ গল্প বা উপন্যাসে সবাইকে সৃষ্টি করে এবং যাকে যেভাবে ইচ্ছা চালিত করে এবং যার মুখ দিয়ে যা খুশি সংলাপ বের করে। ঠিক একইভাবে এই মহাবিশ্ব, তার মধ্যে পৃথিবী এবং তার উপর মানুষসহ সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করে পরমব্রহ্ম সেই একই কাজ করে চলেছে, এখানে আর কারো কোনো ভূমিকা নেই, সকল ভূমিকা কেবল ঈশ্বররূপী পরমেশ্বর বা পরমব্রহ্মের। ঠিক এই কথা ই বলা আছে, দেবী দুর্গার শুম্ভ নিশুম্ভ বধ প্রসঙ্গে। এই যুদ্ধের সময় অসুররা দুর্গার বিরুদ্ধে রক্তবীজ নামক এক দৈত্যকে প্রেরণ করে, এই রক্তবীজের বৈশিষ্ট্য হলো তার দেহ থেকে রক্ত মাটিতে পড়লেই তা থেকে আবার নতুন অসুরের উৎপত্তি হয়। রক্তবীজের রক্ত যাতে মাটিতে না পড়ে, সেজন্য দুর্গা নিজের থেকেই কালীকে সৃষ্টি করে, তখন কালী রক্তবীজের রক্তপান করে তাদের উৎপত্তি বন্ধ করে। এভাবে দুর্গা সমস্ত অসুরকে হত্যা করে। এটা দেখে শুম্ভ দেবী দুর্গাকে বলে,
“তুমি গর্ব করো না, কারণ তুমি অন্যের সাহায্যে এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছ।”
তখন দেবী দুর্গা বলে,
“একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মামপরা। পশ্যৈতা দুষ্ট মধ্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ।।”
অর্থাৎ, একা আমিই এ জগতে বিরাজিত। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কে আছে ? রে দুষ্ট, এই সকল দেবী আমারই বিভূতি। দ্যাখ্, এরা আমার দেহে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এরপর অন্যান্য সকল দেবী, যাদেরকে দুর্গা কালীর আগে সৃষ্টি করেছিলো, তারা সবাই দুর্গার দেহে বিলীন হয়ে যায় এবং দুর্গা শুম্ভকে যুদ্ধে পরাজিত করে হত্যা করে।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্গা কেনো বললো যে, একা আমিই এ জগতে বিরাজিত ? আসলে দুর্গা মানেই তো শিব বা মহেশ্বর, আর মহেশ্বর মানেই পরমব্রহ্ম।
এই কথা ই আবার শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার সপ্তম অধ্যায়ে। কেননা, গীতার সপ্তম অধ্যায়ের মূল কথা হলো, “এই জগতের সকল কিছুই আমা হতে উৎপত্তি, আর জগতের এমন কিছু নেই যাতে আমি নেই।” তাহলে কৃষ্ণ কেনো এই কথা বললেন ? আসলে কৃষ্ণ যেহেতু বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার, সেহেতু কৃষ্ণ মানেই বিষ্ণু এবং আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি বিষ্ণু মানেই পরমব্রহ্ম।
তাহলে এখানে অন্য প্রশ্ন হচ্ছে, এত দেব-দেবী এলো কোথা থেকে ?
আমাদে পরমজ্ঞানী মুনি-ঋষিরা, পরমব্রহ্ম কর্তৃক এই বিশ্বসৃষ্টির তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই দেব-দেবীগুলোকে নানা ভূমিকায় কল্পনা করে নিয়েছেন বা ধরে নিয়েছেন, যেমন আমরা কোনো অঙ্ক সমাধান করতে গিয়ে ‘এক্স’কে ধরে নিই। কিন্তু বাস্তবে আসলে এক্স কিছুই না, কিন্তু এই এক্স একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আমাদেরকে সাহায্য করে মাত্র। আমাদের দেব-দেবীগুলো পরমব্রহ্মকে খুঁজে বের করার বা তাকে উপলব্ধি করার এই এক্স।
তাহলে এখানে আবারও প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই মুনি-ঋষিদের কথা ই যে সত্য, সেটা আমরা বুঝবো কিভাবে, আর মুনি ঋষিদের কথাকে আমরা সত্য বলেই বা মানবো কেনো?
অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, শুধু একটি প্রমান দিই, আমাদের সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রগুলো, যেগুলোকে এখনও আমরা খালি চোখে ‘তারা’ তারা বলে মনে করে থাকি, যেগুলোর মধ্যে পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশি এবং উপগ্রহ চাঁদ ছাড়া আর কোনো গ্রহে মানুষ এখন পর্যন্ত যেতেই পারে নি, সেই গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞানীরা জানা শুরু করেছে মাত্র কয়েকশত বছর আগে থেকে, কিন্তু ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র, যেটা হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ ‘বেদ’ এর অংশ, যা আমাদের মুনি-ঋষিরা লিখে গিয়েছেন ৮/১০ হাজার বছর আগে, সেই জ্যোতিষ শাস্ত্রে শুধু আমাদের সৌরজগতের প্রধান গ্রহগুলো সম্পর্কেই নয়, আমাদের সৌরজগতকে ঘিরে থাকা ২৭টি নক্ষত্র সম্পর্কেও তারা বলে গেছেন।
মুনি-ঋষিরা গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে যা বলে গেছে তার সবগুলো তো এখানে আর উল্লেখ করা সম্ভব নয়, আপনাদের জানাশোনার মধ্য মাত্র একটি উদাহরণ দিই, মুনি-ঋষিরা বলে গেছেন মঙ্গল গ্রহের রং লাল, এখন বিজ্ঞানীরা তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা মঙ্গল পর্যবেক্ষণ করে বলছে যে, হ্যাঁ, মঙ্গল গ্রহের রং লাল। তাহলে সেই ৮/১০ হাজার বছর আগে আমাদের মুনি-ঋষিরা সেটা জানলো কিভাবে, তারা তো আর মঙ্গল গ্রহে গিয়ে দেখে এসে ঐ তথ্য লিখে নি ? শুধু তাই নয়, জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয়, এখন বিজ্ঞানীরা বলছে, হ্যাঁ, তাই। তাহলে এই মুনি-ঋষি, যাদের সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষমতাকে ভাবলে শুধু অবাকই হতে হয়, তাদের কথাকে আপনি বিশ্বাস করবেন না কেনো ?
যারা জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তাদেরকে বলছি, এই মুনি-ঋষিরাই বলে গেছেন, মানষের জীবনের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব এবং তার ফলাফলের কথা, তাহলে তাদের সেই কথাকে আপনি অবিশ্বাস করবেন কিভাবে ? আপনি হয়তো কোনো জ্যোতিষীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন বা কারো প্রতারিত হওয়ার গল্প শুনেছেন, তার মানে তো এই নয় যে জ্যোতিষ শাস্ত্র ভূয়া! প্রয়োজনীয় জ্ঞান না থাকার জন্য ডাক্তার খারাপ হতে পারে, তাই বলে চিকিৎসা বিজ্ঞান যেমন ভূয়া নয়, তেমনি জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে জ্যোতিষী ভূয়া হতে পারে কিন্তু জ্যোতিষ শাস্ত্র এক বিন্দুও মিথ্যা নয়।
যা হোক, ফিরে যাই দুর্গার গল্পে। উপরেই উল্লেখ করেছি-ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর আলাদা আলাদা কোনো সত্ত্বা নয়; ব্রহ্ম যখন সৃষ্টির কাজ করেন তখন তিনি ব্রহ্মা, যখন তিনি পালনের কাজ করেন তখন তিনি বিষ্ণু, আর যখন তিনি ধ্বংসের কাজ করেন, তখন তিনিই মহেশ্বর। একটি উদাহরণ দিলে এই ব্যাপারটি বোঝা আরও সহজ হবে; ধরে নিন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে তিনটি মন্ত্রণালয় আছে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের পাশাপাশি ঐ মন্ত্রণালয়গুলোও দেখাশোনা করেন। এই অবস্থায় তিনি যে মন্ত্রণালয়ের হয়ে ফাইলে সই করেন বা করবেন, তখন কিন্তু তিনি সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কিন্তু বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এবং ব্রহ্মের ব্যাপারটাও ঠিক সেই রকম। তাই যদি না হয় তাহলে বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার কৃষ্ণ, পালনের পাশাপাশি যুদ্ধ ও হত্যার মাধ্যমে পাপী ও দু্ষ্টদের বিনাশ করেছেন কেনো ? ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরকে যদি আলাদা আলাদা সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের কাজ ছিলো শুধু পালন করা, তার তো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বাঁধানোর কোন প্রয়োজন ছিলো না; প্রয়োজন ছিলো না শিশুকালেই রাক্ষসী ও অসুরদের, পরে কংস ও শিশুপালকে হত্যা করার এবং ভীমের মাধ্যমে জরাসন্ধ ও দুর্যোধনকে হত্যা করানোর ? আসলে কৃষ্ণ মানেই বিষ্ণু, আর বিষ্ণু মানেই পরমব্রহ্ম। এজন্য বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার হিসেবে শুধু মানবরূপী কৃষ্ণই নয়, প্রত্যেকটি মানুষ ই যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করে তখন এক অর্থে সে ই ব্রহ্মা, যখন কাউকে পালন করে তখন বিষ্ণু এবং যখন কাউকে ধ্বংস করে তখন শিব। এভাবে এবং এইসব রূপেই প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে পরমব্রহ্ম বাস করে। এজন্যই ছান্দোগ্য উপনিষদ (৩/১৪/১) ও বেদান্ত দর্শনে বলা হয়েছে,
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” অর্থাৎ, সকলের মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান।
আগেই উল্লেখ করেছি, ব্রহ্ম যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করে তখন তার নাম হয় ব্রহ্মা, আর যেকোনো কিছু সৃষ্টি করতেই লাগে জ্ঞান এবং প্রকৃতির নিয়ম হলো নারী ও পুরুষের মিলন ছাড়া কোনো কিছু সৃষ্টি হয় না, সৃষ্টি বলতে সাধারণ অর্থে এখানে মানুষকেই বোঝানো হচ্ছে, তো প্রকৃতির এই নিয়মকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই ব্রহ্মার নারীশক্তি হলো সরস্বতী, যাকে আমরা স্থূল অর্থে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে কল্পনা করে নিয়েছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে কিছু নেই, এমন কি ব্রহ্মা বলেও আলাদা কোনো সত্ত্বা নেই; লেখক কর্তৃক- গল্প, উপন্যাসে একাধিক চরিত্র সৃষ্টির মতো সবই ব্রহ্মের খেলা, এখানে ব্রহ্মই সবকিছু । যা হোক, কোনো কিছু তৈরি বা সৃষ্টি করতে হলে যেমন জ্ঞান লাগে, তেমনি সৃষ্টিকে নিখুঁত করার জন্য নজর রাখতে হয় চারেদিকে, এজন্যই কল্পনা করা হয়েছে ব্রহ্মার চারটি মাথা এবং তার নারীশক্তি সরস্বতীকে জ্ঞানের দেবী হিসেবে।
এবার আসা যাক বিষ্ণুতে। বিষ্ণু হলো ব্রহ্মার পালনকারী রূপের নাম। তো কাউকে পালন করতে কী লাগে ? ধন-সম্পদ। এই জন্যই বিষ্ণুর নারী শক্তি হলো লক্ষ্মী এবং সে ধন-সম্পদের দেবী।
এবার আসি শিব বা মহেশ্বরে। ব্রহ্মের ধ্বংকারী রূপের নাম শিব, মহেশ্বর বা রুদ্র। সৃষ্টি বা পালন করতে যেমন লাগে নারী শক্তি, তেমনি ধ্বংস করতেও লাগে নারী শক্তি। একারণেই রামায়ণের সীতা ও মহাভারতের দ্রৌপদীর জন্ম। এছাড়াও বিখ্যাত, গ্রীস ও ট্রয়ের মধ্যকার যুদ্ধের কারণও ছিলো এক নারী, নাম হেলেন। নারী শক্তি যেমন ধ্বংসের কারণ হতে পারে, তেমনি নারী নিজেও ধ্বংস করতে পারে। প্রকৃতির এই নিয়মকে স্বীকৃতি দিতেই ব্রহ্মের ধ্বংসকারী রূপ মহেশ্বর বা শিবের নারী শক্তি হলো দূর্গা, যার আরেক রূপের নাম কালী।
এই হলো হিন্দু শাস্ত্রের ইতিহাসে দুর্গার উৎপত্তির কাহিনী। কিন্তু এই কথাগুলোকে এই ভাবে না বলে আমাদের পুরাণ রচয়িতারা নানা ঘটনার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন দেব-দেবীর জন্ম দিয়েছে, যে ঘটনাগুলো যুক্তি-তর্ক-প্রশ্নের বাইরে নয়। যেমন শুরুতেই উল্লেখ করেছি, সকল দেবতার শক্তি মিলে উৎপত্তি দেবী দুর্গা যদি অসুরদের হত্যা করতে পারে, তাহলে সকল দেবতা মিলে তা করতে পারলো না কেনো ? এই ঘটনায় প্রকৃতির নিয়মকে অস্বীকার করা হয়েছে; কারণ, প্রকৃতির নিয়মই হলো একের চেয়ে বহুর শক্তি বেশি, কিন্তু এখানে দেখানো হয়েছে বহুর চেয়ে একের শক্তি বেশি, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব। শ্রীকৃষ্ণ ইচ্ছা করলে তার একার শক্তির দ্বারাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সমগ্র কুরুবংশকে ধ্বংস করতে পারতেন, রাম পারতেন রাবনের বংশকে বিনাশ করতে, কিন্তু তারা তা না করে একটি পদ্ধতিগত যুদ্ধের সাহায্য নিলেন কেনো ? কারণ, এটাই বাস্তব এবং তা লোকশিক্ষার উপযোগী। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দূর্গার একার যুদ্ধ সম্পূর্ণ অবাস্তব।
এই প্রসঙ্গে পুরাণের গল্পগুলো নিয়ে কিছু বলা দরকার। পুরাণের গল্পগুলো রচিত হয়েছে বেদ এর সূত্র বা ক্লু নিয়ে। কিন্তু পুরাণ রচয়িতারা সব সময় ক্লুগুলো যে ঠিক মতো বুঝতে পেরেছে, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে; কারণ, একই বিষয়ে একেক পুরাণে একেক রকমের কথা বলা আছে। উদারহণ হিসেবে বলছি- গনেশের উৎপত্তির গল্প আপনি যত পুরাণে পাবেন, সবটাতেই দেখবেন আলাদা আলাদা গল্প। সবাই যদি বেদ এর সূত্রগুলো ঠিক মতো বুঝতে পারতো তাহলে সব গল্প একই রকম হতো। পুরাণের গল্প সম্বন্ধে আর একটা কথা খুব বেশি মনে রাখা দরকার যে, ওগুলো শুধুই গল্প, বাস্তবে কোনোদিন কোথাও এই ঘটনাগুলো ঘটে নি, শুধু লোকশিক্ষার জন্য আমাদের পুরাণ রচয়িতারা এই গল্পগুলো লিখেছে।
দেব-দেবীর উৎপত্তি রহস্যের পর এবার দূর্গা পূজার প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপারগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক। দূর্গা কাঠামোতে প্রথমেই যেটা নজরে আসে, সেটা হলো দুর্গার ১০ হাত। আমাদের পুরাণ রচয়িতারা দুর্গার আবির্ভাবের পর তাকে সুপারওম্যান হিসেবে পাওয়ার ফুল করার জন্য প্রথমে ৪ হাত, তারপর ৮ হাত, তারপর ১৬ হাত এবং সবশেষে ১৮ হাত পর্যন্ত দিয়েছিলো; কেননা যেহেতু প্রকৃতির নিয়ম হলো যত হাত তত শক্তি, কিন্তু এই ১৬/১৮ হাত অবাস্তব বিবেচনা করে, শেষ পর্যন্ত বাস্তবের ১০ দিককে ঠেকানোর জন্য তারা ১০ হাত ফাইনাল করে এবং এখন পর্যন্ত সেটাই জনপ্রিয় এবং সেটাই চলছে। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, যেসকল পুরাণ ও উপপুরাণে দূর্গা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলি হলো- মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও দেবী-ভাগবত। দূর্গা দুর্গা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে যেমন- জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বন দূর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী প্রভৃতি নামে ও রূপে পূজিতা হন।
দূর্গার হাতের পর নজরে আস দুর্গার পায়ের নিচে থাকা সিংহ। প্রচলিত মতানুযায়ী অনেকেই জানেন যে, দূর্গার বাহন হলো সিংহ। কিন্তু দেবতাদের এই বাহনের ধারণাটাই একটা মিথ্যা ধারণা। প্রত্যেক দেবতা এমনিতেই তো অসম শক্তির অধিকারী, তাদের আবার বাহনের প্রয়োজন কী ? বাস্তবতা বিবেচনা করলে সিংহ না হয় অনেক বড় ও শক্তিশালী, তাই সিংহের হয়তো দূর্গাকে বহন করার ক্ষমতা আছে, কিন্তু ময়ূরের কি কার্তিককে বহন করার ক্ষমতা আছে, না ইঁদুরের গনেশকে ? তাহলে ময়ূর ও ইঁদুরকে তাদের বাহন বলছি কেনো ? প্রকৃপক্ষে এই সব জীবজন্তু ঐসব দেব-দেবীর বাহন নয়, তারা প্রকাশ করে অন্য কিছু, এই লেখাটা পড়তে থাকুন, আস্তে আস্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার কাছে।

সিংহ হলো দূর্গার তেজ, ক্রোধ ও হিংস্রতার প্রতীক। হ্যাঁ, একথা ই বলা আছে পদ্মপুরানে। যদিও পদ্মপুরানে বলা আছে দুর্গার ক্রোধ থেকে সিংহের জন্ম হয়, কিন্তু আমি আসলে দেব-দেবী ও তাদের বাহনদের জন্ম থিয়োরিতে বিশ্বাস করি না; কারণ তাতে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয় যেগুলোর উত্তর দেওয়া যুক্তিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সম্ভব হয় না। আগেই উল্লেখ করেছি, সকল দেব-দেবী, বিশ্বসৃষ্টি ব্যাখ্যার জন্য মুনি-ঋষিদের কল্পনা, তাই তাদের আবির্ভাবের ঘটনাকে জন্ম না বলে উৎপত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছি এবং করছি; কারণ, জন্ম মানেই বায়োলজিক্যাল ব্যাপার, যেখানে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী নারী পুরুষের যৌনতা মাস্ট। কিন্তু পুরাণ কাহিনী মতে, কোনো দেব-দেবীর জন্মই বায়োলজিক্যাল নিয়মে হয়নি। আর দেব-দেবীদের বাহন হিসেবে যাদের বলা হয়, তারা, বিজ্ঞানের বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীতে সভ্য মানুষ সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই আছে, তাই দেব-দেবীদের সাথের এক একটি প্রাণী, এক একটি প্রতীক মাত্র, যা মানুষকে শিক্ষা দেয় অনেক কিছু, যেটা আমি পরে এই লেখাতেই আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
সিংহের পর, দুর্গার কাঠামোতে নজরে আসে মহিষ ও মহিষাসুরের। এটা অনেকেই জানেন যে, যে অসুরদেরকে হত্যা করার জন্য দুর্গার এই যুদ্ধ, সেই অসুরদের প্রধান, নানা রূপ ধারণ করতে পারতো, সম্ভবত এই অসুরের একটি পছন্দের রূপ ছিলো মহিষ, এর কারণও সম্ভবত, একটি বাঘ বা সিংহের চেয়ে একটি মহিষের শক্তি অনেক বেশি, অসুরের এই রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতাকে বোঝানোর জন্যই দুর্গায় কাঠামোয় ব্যবহার করা হয় মহিষ এবং এই মহিষের নাম অনুসারেই ঐ অসুরের নাম মহিষাসুর।
দুর্গা পূজার জন্য শুধু এতটুকুই যথেষ্ট ছিলো, কিন্তু তার সাথে আমরা জুড়ে দিয়েছি-শিব, গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী, নবপত্রিকাসহ আরও নানা কিছু, এর কারণ কী ? আসলে দুর্গা পূজা একটি মহাশক্তি ও মহামিলনের পূজা। সেকারণেই এই পূজায় সকল শক্তির মিলন ঘটানো হয়েছে। খেয়াল করে দেখবেন, দুর্গা ছাড়া, দুর্গার সাথেই পূজিত অন্য সকল দেবতার পূজাই বছরের বিভিন্ন সময় করা হয়। এই যেমন- দুর্গা পূজার রেশ না ফুরাতেই লক্ষ্মী পূজা, তার কয় দিন পর দুর্গারই আরেক রূপ কালী পূজা, তার কয়দিন পর কার্তিক পূজা, কিছু দিন পর সরস্বতী পূজা, এরপর গণেশ পূজা। তারপরও দুর্গাপূজার সময় আবার এই সকল দেব-দেবীকে একত্রিত করা হয় মূলত দুর্গাপূজাকে একটা ব্যাপকতা দেওয়া এবং সকল শক্তির সম্বন্বয়ে একটি মহাশক্তির পূজায় পরিণত করার উদ্দশ্যে।
দুর্গার কাঠামোয় আর একটি রহস্যময় ব্যাপার হলো নবপত্রিকা। পত্রিকা মানে পাতা হলেও আসলে নবপত্রিকা হলো নয়টি গাছ। এগুলি হল –
কদলী বা কলা, হরিদ্রা বা হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব বা বেল, দাড়িম্ব বা ডালিম, অশোক, মান, কচু এবং ধান। একটি পাতাযুক্ত কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি গাছ মূল ও পাতাসহ একত্র করে একজোড়া বেল সহ সাদা অপরাজিতা গাছের লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। আর না জেনে আমরা এটাকেই মনে করে আসছি গনেশের বউ।
আবার আমরা অনেকেই মনে করি যে, লক্ষ্মী-সরস্বতী দুর্গার মেয়ে, এই ভাবনার কারণ হলো, কার্তিক গনেশ লক্ষ্মী সরস্বতীসহ দুর্গার পূজা শুরু হয় কোলকাতায় ১৬১০ সালে। দুর্গার সাথে একই কাঠামোয় কার্তিক গনেশ লক্ষ্মী সরস্বতীকে দেখে খুব সহজেই একটি পরিবারের চিন্তা মাথায় এসেই যায়, এই ভাবনা থেকেই আমরা মনে করে আসছি যে লক্ষ্মী, সরস্বতী দুর্গার মেয়ে এবং সঠিক তথ্য না জেনে সেই ভুল বিশ্বাসকেই আমরা শত শত বছর ধরে সঞ্চারিত করে এসেছি আমাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়, দেবীদের উৎপত্তির ইতিহাসে, লক্ষ্মী-সরস্বতী, দুর্গার সিনিয়র, যদিও তারা তিনজনই একই পদমর্যাদার দেবী; কারণ- সরস্বতী, লক্ষ্মী ও দুর্গা যথাক্রমে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের নারী শক্তি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে একসাথে এতগুলো দেব-দেবীর পূজার করার দরকার কী ?
প্রথমে দুর্গা পূজা যখন শুরু হয় তখন শুধু দুর্গাকেই পূজা করা হতো এবং দুর্গার সাথে থাকতো মহিষ ও অসুর। দুর্গার প্রাচীন যেসব মূর্তি পাওয়া গেছে সেগুলোতে এর প্রমান আছে। কিন্তু ১৬০০ সালের পর যেসব দুর্গাপূজা শুরু হয় সেগুলো শুরু হয় রাজাদের মাধ্যমে, আর রাজারা চাইতো কয়েকদিন ব্যাপী বিরাট একটি জমজমাট উৎসব, কারণ তাদের টাকার কোনো প্রব্লেম ছিলো না, এক্ষেত্রে মূর্তি যত বড় ও বেশি হতো উৎসবও হতো তত জমজমাট ও মানানসই; কারণ এত বড় আয়োজন করতে গেলে অনুষ্ঠানে এমনি ই একধরণের সাজ সাজ রব পড়ে যেতো, এটা হলো সামাজিক কারণ। কিন্তু এর সাথে আধ্যাত্মিক কারণও আস্তে আস্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে; নির্জলা একাদশীর উপবাস নামে হিন্দু শাস্ত্রে একটা উপবাসের বিধান আছে, যার একটা অন্যতম কারণ হলো, সারা বছরের উপবাসগুলো পালন করতে গিয়ে যদি নিজের অজ্ঞাতেই কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে নির্জলা উপবাস করলে তার পাপ মোচন হয়ে যায়। সেই রকম সারা বছর সকল দেব-দেবীর পূজা করা হলেও দেবী দুর্গার সাথে যদি তাদের আবারও পূজা করা হয়, তাহলে একক পূজায় যদি কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে, তাহলে তার পাপ, দেবতারা মাফ করবেন বলে এক সময় বিশ্বাস করা হতো।
এছাড়াও এই বহু দেবতার পূজা একসঙ্গে করার অন্য যে আধ্যাত্মিক কারণ, তা হলো- শক্তির দেবী দুর্গাপূজাকে একটি মহাশক্তির পূজায় পরিণত করা। খেয়াল করবেন এখানে রয়েছে সকল দেবতার প্রতিনিধি- শিব তো আছেই, শিবের প্রতিনিধি হিসেবে আছে স্বয়ং দুর্গা; ব্রহ্মার প্রতিনিধি হিসেবে আছে সরস্বতী; বিষ্ণুর প্রতিনিধি হিসেবে আছে লক্ষ্মী; এরপর আছে গণেশ, যিনি সকল কাজের সিদ্ধিদাতা; আছে কার্তিক, যিনি যোদ্ধার প্রতীক; প্রকৃতির সকল গাছপালার প্রতিনিধি হিসেবে আছে নবপত্রিকা, প্রাণী জগতের প্রতিনিধি হিসেবে আছে- সাপ, সিংহ, মহিষ, ময়ূর, ইঁদুর, পেঁচা, হাঁস। এছাড়াও আপনার শুনে থাকবেন যে, দুর্গা পূজা করতে গেলে বেশ্যার ঘরের মাটি লাগে, এর মানে হলো এই পূজা করতে গেলে কাউকেই ঘৃণা করা যাবে না্, সমাজের উচ্চ থেকে নীচ সকলকে নিয়েই এই পূজা করতে হবে, কেউ এখানে অবহেলিত বা ঘৃণিত নয়। এইভাবে দেবলোক এবং প্রাণী ও প্রকৃতিজগতের সকল কিছুর সমন্বয়ে দুর্গাপূজা হয়ে উঠেছে এক মহামিলনের মহাশক্তির পূজা।
এবার নজর দেওয়া যাক দুর্গা পূজার অন্যান্য বিষয়গুলোতে।
মহালয়া হলো সাধারণভাবে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিন। কিন্তু তিথির ফেরে ২ বছর পর পর এটি কার্তিক মাসের প্রথমে গিয়ে পড়তে পারে, যে বছর দুর্গা পূজা কার্তিক মাসে গিয়ে হয়। তো যে বছর দুর্গা পূজা কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়, তার পরের বছর মলমাস হিসেবে ৩০ দিন পুরো হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দুর্গা পূজাকে আবার আশ্বিন মাসের প্রথমে আনা হয়। একারণেই চন্দ্র ও তিথির হিসেব অনুযায়ী হিন্দুধর্মের সকল পূজা পার্বন অনুষ্ঠিত হলেও, কোনো অনুষ্ঠানের তারিখই একমাসের বেশি হেরফের হয় না। কিন্তু চন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী চললেও শুধু মলমাসের সিস্টেম না থাকার কারণে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সারাবছর ধরে ঘুরতে থাকে।
যা হোক, মহালয়া মানে আমরা সাধারণভাবে জানি যে, ভোরের বেলা রেডিও বা টিভিতে একটি অনু্ষ্ঠান, যাতে দেবী দুর্গার কাহিনীসহ চণ্ডীপাঠ উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এর সাথে আমরা হয়তো এটা অনেকেই জানি না যে, প্রকৃতপক্ষে মহালয়া থেকেই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু।
মহালয়া তিথির আরেক নাম পিতৃপক্ষ। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, এই তিথিতে সকল মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে। তাদের এই নেমে আসাকে বলে মহালয়, আর সেই মহালয় থেকেই মহালয়া। তাই এদিন সকালে পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি ও সন্তুষ্টির জন্য নদীতে স্নান করে পূর্বপুরুষদেরকে স্মরণ করে নদীর জলেই অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। মহালয়ার তিথি শেষ হলেই শুরু হয় দেবীপক্ষ, যা চলে পূর্ণিমা পর্যন্ত। এই দেবীপক্ষেরই সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে দুর্গা পূজার মূল অনুষ্ঠান।
দুর্গা পূজার প্রধান অনু্ষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হলো কুমারী পূজা। অষ্টমী তিথিতে করা এই পূজায় দুর্গাকে কুমারী হিসেবে পূজা করা হয়। কারণ, সকলের দুর্গতি নাশকারী আশ্রয় দাত্রী হিসেবে দুর্গাকে মা বলা হলেও দুর্গা আসলে কুমারী। স্থূল দৃষ্টিতে দুর্গাকে শিবের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হলেও আসলে দুর্গা শিবস্থিত নারী শক্তি, যার কোনো আলাদা সত্ত্বা নেই। কিন্তু দুর্গাকে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে ধরে নেওয়ার পর, নারী জাতির একান্ত চাওয়া পুত্রের শখ পূরণ করতে দুর্গার একটি পুত্র গণেশের কল্পনা করা হয়েছে, পুরাণ মতে যাকে দুর্গা নিজেই সৃষ্টি করে; আর পরবর্তীতে এক অসুরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ব্রহ্মার পরিকল্পনায়- শিব, দুর্গাকে অপর পুত্র, কার্তিককে দেন। মূলত দুর্গার এই দুই পুত্রলাভ কোনো সেক্সুয়াল এবং বায়োলজিক্যাল ঘটনা নয়, সেকারণে দুর্গা কুমারী ই, এজন্যই দুর্গাকে কুমারী রূপে পূজা করতে হয়।
তাছাড়াও দুর্গার যুদ্ধকালীন রূপ, যে রূপকে আমরা্ পূজা করি, দুর্গার সেই রূপ যে কুমারী তার প্রমান আছে শুম্ভ নিশুম্ভের কাহিনীতে। যেমন- অসুর নিধন উদ্দেশ্যে দুর্গার আবির্ভাবের পর তাকে দেখে শুম্ভ নিশুম্ভের চর চণ্ড ও মুণ্ড, শুম্ভ নিশুম্ভকে গিয়ে বলে এমন নারী আপনাদেরই যোগ্য। এই কথা শুনে তারা অন্য এক অসুর সুগ্রীবকে দুর্গার কাছে পাঠায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে, কিন্তু দুর্গা তাকে বলে, “আমি যে প্রতিজ্ঞা করেছি, যে আমাকে যুদ্ধে হারাতে পারবে, তাকেই আমি বিয়ে করবো, তোমার প্রভুকে গিয়ে বলো।” এরপরই শুম্ভ নিশুম্ভ দুর্গার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করে। যুদ্ধের আগে দুর্গা যদি নিজেকে কুমারী হিসেবে বিবেচনা না করতো, তাহলে কিন্তু সে এই কথাটি এভাবে বলতে পারতো না। যা হোক, এই কুমারী পূজার মাধ্যমে পরিবারে কুমারী মেয়েদের সম্মানের বিষয়টি যেমন তুলে ধরা হয়েছে, সেই সাথে দুর্গার মতো হা্তে অস্ত্র ধরলেই যে তারা কেবল অসুর রূপী মানুষদের থেকে নিজেদের সম্মান ও কুমারীত্বকে রক্ষা করতে পারবে, সেই বার্তাটিও ইয়াং মেয়েদের দেওয়া হয়েছে।
দুর্গা পূজার আরেকটি প্রধান বিষয় হলো সন্ধিপূজা। কিন্তু সন্ধিপূজা আসলে কী এবং কেনো এর নাম সন্ধিপূজা, সেই ধারণা সম্ভবত অনেকেরই নেই। শুধু দুর্গা পূজা নয়, হিন্দু ধর্মের সকল অনুষ্ঠানই তিথি নির্ভর। আমরা জানি, সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিস্থলে এই পূজা হয় বলেই এর নাম সন্ধিপূজা।

Asif Kabir October 2, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article দিঘলিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী

দিনপঞ্জি

October 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
« Sep    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

দুর্গাপূজা কি, কেন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

By Asif Kabir 19 minutes ago
খুলনাতাজা খবর

দিঘলিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

আজ বিজয়া দশমী, ও তার ইতিহাস

By Asif Kabir 1 hour ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

খুলনাতাজা খবর

দিঘলিয়ায় শারদীয় দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

আজ বিজয়া দশমী, ও তার ইতিহাস

By Asif Kabir 1 hour ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রকাশিত তথ্য বিভ্রান্তিকর

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?