শহিদ জয়, যশোর : কোনখাতে আয় না থাকলেও দেড়দশকে কোটিপতি বনে গেছেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য রণজিত রায়ের স্ত্রী নিয়তী রাণী। কোটিপতি হয়েছেন এমপি নিজেও। নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য দিলেও সন্তানদের উন্নতির চিত্র তুলে ধরেননি।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও এমপি হতে চান তিনি। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তার চারটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য মিলেছে।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রণজিত রায়। টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকায় তার ভাগ্যবদল হয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সঙ্গে তার স্ত্রী নিয়তি রানীও অর্জন করেছেন অঢেল সম্পদ।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সংসদ রণজিত কুমার রায় উল্লেখ করেছিলেন, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার স্ত্রী নিয়তী রানীর সম্পদের মূল্যে ৮৫ হাজার টাকা। দেড় দশক পরে এবারের হলফনামায় তিনিই উল্লেখ করেছেন, স্ত্রী নিয়তির সম্পদ বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৮ টাকা। একইসাথে স্ত্রীর কোন গাড়ি না থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার। অবশ্য স্ত্রীর বর্তমানেও কোন আয় নেই। আগেও ছিল না।
আর ২০০৮ সালে রণজিত রায়ের আয় ছিলো এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৮ টাকা। এইচএসসি পাস রণজিতের আয়ের উৎস পারিতোষিক, ব্যবসা, কৃষি ও ভাড়া আদায়।
হলফনাম বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, এমপি রণজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে পৈত্রিক সূত্রে ৪ বিঘা কৃষি জমির মালিক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরো ১২ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। অবাক করা তথ্য হলো মাত্র এক লাখ টাকায় কিনেছেন এ ১২ বিঘা জমি। সে হিসাবে প্রতি বিঘা জমির মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা।
স্ত্রীর নামে ২০০৮ সালে কোন জমি বা বাড়ী না থাকলেও বর্তমানে ৩টি বাড়ি রয়েছে তার। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী যার মূল্য এক কোটি ৪৬ লাখ ৭২হাজার টাকা। একইসাথে বাড়ী/অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে আরো ৫০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে রণজিত কুমার রায়ের কাছে এক লাখ টাকা নগদ থাকলেও বতমানে তার হাতে নগদ এক কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা নগদ ছিল। বর্তমানে তার কাছে ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ নগদ টাকা রয়েছে। পূর্বে ব্যাংকিং সঞ্চয় ডিপিএস হিসেবে কোন টাকা না থাকলেও বর্তমানে এমপি রণজিত রায় দম্পতির ২৭ লাখ ৩৮হাজার ৪৯২টাকা আছে। তার কোন দায় দেনা নেই।
স্ত্রী ও নিজের সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করলেও হলফনামায় এমপি রণজিত কুমার রায় তার সন্তানদের তথ্য উল্লেখ করেননি।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা জানান, রণজিত রায় হলফনামাতে যা উল্লেখ করেছেন তা সব মিথ্যা। তিন মেয়াদে সংসদ নির্বাচিত হওয়াতে কয়েক কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি। রণজিত রায়ের পছন্দের বাইরে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি ও তার স্ত্রী নিয়তি রানী পর্যায়ক্রমে দুই উপজেলার অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন গোটা সময় জুড়ে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় একাধিকবার শিরোনাম হয়েছেন দুজনই। বাংলাদেশ ভারতে দুই দেশেই তার বাড়ি রয়েছে। এমনকি তিনি যত জমি কিনেছে তার দাম কয়েক কোটি টাকা। প্রকৃত অর্থে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আরো অনেক বিত্তবৈভবের মালিক।
দেড়দশকে বিনা আয়ে কোটিপতি রণজিতের স্ত্রী নিয়তী
Leave a comment