সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : পাঁচটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের নোড়ার চকের শাহজাহান গাজীর ছেলে।
খুলনা র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা অফিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, দেবহাটা থানার জিআর-১২৮/২২, ১১১/২২, ১২৭/২২, ৭০৩/১৯ ও ২৭৩/১৫ নং মামলার আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ও ২০২৪ সালের পহেলা নভেম্বর খলিষাখালির ভূমিহীন নেতা কামরুল গাজী হত্যা মামলার পলাতক আসামী রবিউল ইসলাম। সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ থাকায় তাকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গীতা মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
তবে গ্রেপ্তারকৃত রবিউল ইসলাম (৪২) জানান, তিনি দীর্ঘদিন খলিষাখালি ভূমিহীন পল্লীতে ভূমিহীনদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে কার বার বার ভূমিদস্যু সখীপুরের আইডিয়ালের নজরুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, তার ছেলে সুরুজ কাজী, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদসহ কয়েকজন পুলিশের সহায়তায় বারবার তাদের উপর হামলা মামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের রায় জমির মালিক দাবিদারদের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাকেসহ ভূমিহীন নেতাদের বিরুদ্ধে একে একে মিথ্যা মামলা দেয়।
দেবাহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, রবিউলকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পারুলিয়ার চণ্ডিচরণ ঘোষের খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি ১৯৫৫ সাল থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে মাছ চাষ করে আসছিলেন ভূমিদস্যু সখীপুরের আইডিয়ালের নজরুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, তার ছেলে সুরুজ কাজী, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ, পারুলিয়ার সিরাজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলামিসহ একটি মহল। ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী ওই জমি খাস করার দাবি করে সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ দ্বিতীয় আদালতে মামলা (১০/১০) করেন। এ মামলায় ওই আদালত ওই জমি লাওয়ারিশ ঘোষনা করে। ওই আদেশকে ট্যালেঞ্জ জানিয়ে মালিক দাবিদাররা পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করলেও ফল তাদের বিপক্ষে যায়। এরই মধ্যে সাপমারা খালের দুপাশের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ৭৮৫টি ভূমিহীন পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করে। দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ ও তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ঐক্যবদ্ধ ভূমিহীন নেতাদের কঠোর হস্তে দমন করার উদ্যোগ নেয়।
খলিষাখালি মুজিবনগর ভূমিহীন পল্লীর সভাপতি আনারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, আকরাম হোসেন, সাইফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম আব্দুল গফুর, ইসমাইল মেম্বর, গোলাপ ঢালীসহ কমপক্ষে তিন ডজন ভূমিহীন নেতা কর্মীর নামে ইয়াবা, অস্ত্র, ও চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। ভূমিহীনদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের পিএন হাইস্কুলের পাশ থেকে পুলিশ পরিদর্শক তারেক অপহরণ করে নিয়ে যায়। দীর্ঘ আট ঘণ্টা পর তাকে আটক করা হয়েছে মর্মে স্বীকার করে পুলিশ। তাকে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ সেলে নির্যাতন শেষে একটি নাশকতা ও চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে ২৪ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জমির মালিক দাবিদারদের ১৬৪/২১ নং সিভিল রিভিউ পিটিশন প্রধান বিচারপতি খারিজ করে দেওয়ার পরপরই নলতা র চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম, মাছ আনারুল, পারুলিয়ার চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ একটি চক্রের সঙ্গে সমঝোতা করে স্বত্বহীন জমির মালিকরা নতুর কৌশলে ভাগাভাগির মাধ্যমে ওই জমি জবরদখল করে রাখে। এতে ভূমিহীন নেতা আনারুল, রবিউল, শহীদুল, বুল্লা, পাখরা হালিম, শাহীনুরসহ ২৩ জনকে প্রলোভন দেখিয়ে ১৩১৮ বিঘা জমির ঘেরের মাছ বিক্রি ও ঘের দেখভালের কাজে ব্যবহার করে ওই চক্রটি। ফলে খলিষাখালি ভূমিহীন সংগঠণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। আনারুল, রবিউল, শহীদুল, বুল্লা, পাখরা হালিম, শাহীনুরসহ নলতা চেয়ারম্যানের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ভূমিহীনদের একাংশের নেতা আকরাম, গফুর, ইসমাইল মেম্বর, সাইফুল ও কামরুলদের বিরোধিতা শুরু করে।
ক্রমশঃ তারা দফায় দফায় গুলি করে ও কুপিয়ে জখম করে সাইফুলসহ কয়েকজনকে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে গত বছরের পহেলা নভেম্বর খলিষাখালিতে ভূমিহীন অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় আরিজুল, গোলাম ফারুক বাবু ও সিরাজুল ইসলামের নেতত্বে আনারুলম রবিউল, শহীদুল, বুল্লা, হালিম, শাহীনুরসহ দেড় শতাধিক সন্ত্রাসী সাইফুল, কামরুল ও রিয়াজুলের নেতৃত্বাধীন ভূমিহীনদের উপর হামলা করে। এতে কমপক্ষে ২০ জন ভূমিহীন নারী পুরুষ ও শিশুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পিটিয়ে হত্যা করা হয় কামরুলকে। ছয়জন ভূমিহীনকে বোমা ও দা দিয়ে মামলা দেয় ভূমিদস্যু আইডিয়ালের নজরুল ও তার সহযোগিরা। হত্যা মামলায় অরিজুল, গোলাম ফারুক বাবু ও সিরাজুল ইসলাম আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার আসামিদের জামিনের ঘর বিরোধিতা করেন করেন। কৌশলে সাক্ষী হয়ে ছেলে রিপনের ইচ্ছায় তিন আসামীর পক্ষে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে এফিডেফিড দেন আবুল হোসেন। ভূমিহীন জনপদের প্লট বিইক্রর নামে ক্যাশিয়ার সেজে লাখ লাখ টাকা পকেটস্ত করে রিপন। সম্প্রতি সাইফুল ও আব্দুল গফুরের নেতৃত্বে ওই জমি দখল করার কয়েক ঘণ্টা পর আনারুল ও রবিউল ওই জমি দখলে নেয়। এতে নিহত কামরুলের স্ত্রী মার্জিনা বেগমসহ উভয় পক্ষের ২০ জনেরও বেশি লোক গুরুতর জখম হয়। লুটপাট করা হয় কমপক্ষে ১৫টি বাড়িতে। এ ছাড়া রবিউল, আনারুল, হালিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বালিয়াডার ইসরাফিল গাজীকে গোলাম কাজীর সাবেক ঘেরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে লাশ গুম করার অভিযোগ রয়েছে। যাহা তার মায়ের দেবহাটা থানার অভিযোগ থেকে জানা যায়।
দেবহাটায় কামরুল হত্যা মামলার আসামি রবিউল র্যাবের জালে
