
বাল্যবিবাহকে অভিশাপ হিসেবেই মনে করে আমাদের বর্তমান সমাজ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর পরও দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ শীর্ষে। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফ পরিচালিত ‘বাল্যবিবাহ বন্ধের কার্যক্রম দ্রুততর করতে বৈশ্বিক কার্যক্রম’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম এবং বিশ্বে অষ্টম। বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে তিন কোটি ৪৫ লাখ কিশোরীর আর ১৫ বছর হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে এক কোটি তিন লাখ কিশোরীর। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা ১৯৭০ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে, তা সত্ত্বেও এখনো এই হার অনেক বেশি। ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫২ শতাংশ মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে। বাল্যবিবাহের শিকার শিশুদের বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের ও গ্রামে বাস করে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী পাঁচ দশকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইউনিসেফ মনে করে, করোনার চলমান প্রভাবের কারণে বাল্যবিবাহ রোধের অর্জনগুলো হুমকিতে পড়েছে। এমনকি এটি আগের অবস্থায়ও ফিরে যেতে পারে। বাল্যবিবাহ যে পরিমাণে কমে আসছিল, করোনা মহামারি তা এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, যেসব মেয়ের কনে হিসেবে নয়, শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার কথা, তাদের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পরিবারগুলোকে বাল্যবিবাহের মতো মিথ্যা ধারণার আশ্রয় নিতে বাধ্য করছে। বাল্যবিবাহের মাধ্যমে অসংখ্য মেয়ের শৈশব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকন্যাদের বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এ জন্য আইনের প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আইন করেই এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না, এর জন্য প্রয়োজন হবে ব্যাপক জনসচেতনতাও। নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবখানেই সচেতনতার মাত্রা বাড়াতে হবে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। আর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাল্যবিবাহ নির্মূল করতে হবে ২০৪১ সালের মধ্যে। প্রশাসন, সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় শিক্ষিতজনরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলেই শুধু আমরা বাল্যবিবাহের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারি।