
এম সাইফুল ইসলাম
শহীদ দয়াল নন্দী। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিযোগে খুলনার দৌলতপুর খালেক সাহেব এর গোডাউনে ১৯৭১ সালের পহেলা মে বেলা ১২ টায় তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রীসহ আরো অনেক মহিলাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ গোডাউনেই তাদেরকে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় নদীপার করে নিয়ে যাওয়া হয় দিঘলিয়া।
তার স্ত্রী রেখা নন্দী সেই বিভীষিকাময় দিন নিয়ে আজও বেছে আছে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তখন আমার বয়স ২৫ বছর আমার বিয়ে হয়েছিল দৌলতপুর। খুলনার দৌলতপুর খালেক সাহেব এর গোডাউনে আমার স্বামীকে খাঁন সেনারা মেরে ফেলেছিল। সেই সাথে দিঘলিয়ায় আমাদের রাতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
এরই মধ্যে আমার কাছে স্বামীর মৃত্যুর খবর চলে আসায় আমার দুইটি বাচ্চার কথা ভেবে চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। পরদিন সকালে আমাকে হয়ত আমার কোলের দুইটি বাচ্চার কথা চিন্তা করে পাক সেনারা ছেড়ে দিল। আমার স¦ামীর বন্ধুর মাধ্যমে আমি আমার বাবার বাড়ি ফিরে আসি।
তিনি আরও জানান, আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে ভারতে যাই। আমরা ছিলাম বানীপুর ক্যাম্পে। আমার ছেলের বয়স চার বছর আর মেয়ের দুই বছর। আমাদের ক্যাম্পে নিয়মিত কার্ডের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হত। ক্যাম্পে আমার বাচ্চারা প্রায়ই অসুস্থ হত আমি তখন ভিষণ দুঃচিন্তায় থাকতাম।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পঞ্চাশ বছর পর ঐ দিনের কথা কেউ বুঝবে না। ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে আমার আমি আমার পরিবারের সাথে থাকলাম কিছু দিন। তারপর আবার যুদ্ধ আমার সন্তানদের মানুষ করার জন্য। পাকিস্থানী বাহিনী আমার স্বামী কে হত্যা করে আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছিল একা একজন ২৫ বছরের বিধবা মহিলা এ সমাজে কি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে ছিলাম তা আমার মত ভগ্যহারারা ছাড়া কেউ বুঝবে না। দেশ স্বাধীন না হলে কি করতাম বলতে পারি না। স্বাধীন দেশেও আমার স্বামী শহীদের স্বীকৃতি পেল না।আমি আর আমার সন্তানরা কোন সরকারি সুবিধা ও পায়নি।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক আবু জাফর বলেন, পাকহানাদারদের গণহত্যার শিকার শহীদের নাম তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে হয়েতো বাদ পড়তে পারে দয়াল নন্দীর নাম।