দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নানা কারণে এ নির্বাচন বিতর্কিতও বটে। প্রধান কারণটি হলো, দেশের মানুষের এক বড় অংশকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ দলটি ছাড়াও আরও অনেক দলের সিদ্ধান্তও এমনটাই। এ অবস্থায় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতেই হচ্ছে। তবে এমন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু না, পরিবেশ শান্তির অনুকূলে নয়।
নির্বাচন বয়কটকারী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে। কোথাও কোথাও নাশকতার ঘটনাও ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে আগুন ধরানো হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগানোর ফলে কমপক্ষে চার যাত্রী পুড়ে মারা গেছেন।
ওদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতারত প্রার্থীদের সমর্থকরা কোথাও কোথাও দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। আজ নির্বাচনের দিন এ সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে। আমরা চাইব, আজ একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হবে এবং যথাসময়ে যথানিয়মে ফলাফল ঘোষিত হবে।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশে আশঙ্কাজনকভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা জন্ম দিচ্ছে সামাজিক অস্থিরতারও। অথচ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক স্থিরতা ছাড়া একটি দেশ কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারে না। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর পেছন ফিরে তাকিয়ে আমরা দেখতে পাই, এ জাতি অনেক কিছু পেয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত যা পায়নি, তা-ও অনেক। আমাদের যেতে হবে বহুদূর। সম্ভাবনাও রয়েছে প্রচুর। বাংলাদেশ একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হবে, বিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থা এমন ভবিষ্যদ্বাণীও করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর যে দেশপ্রেম থাকা দরকার, তা কি তাদের আছে? বলাই যায়, দেশের রাজনীতি অনেকটাই ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এই চিন্তাকাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়-এটাই হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এ দেশের মানুষ দেশপ্রেমী, তারা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে একটি উন্নত সম্পদশালী দেশে বাস করতে চান। জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখেই কর্মপদ্ধতি সাজাতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।
নির্বাচন যতই বিতর্কমূলক হোক না কেন, ভোটগ্রহণের সময় নির্বাচকমণ্ডলী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন যদি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে পারে, তাহলে বিতর্কের অনেকটাই মীমাংসা হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনকেও নিতে হবে দৃঢ় অবস্থান। কোথাও কোনো অনিয়ম ঘটলে নিতে হবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা। আমরা সবাই আজকের এই জাতীয় নির্বাচনকে সর্বাঙ্গীন সফল ও সুন্দর দেখতে চাই।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত