
পর্যবেক্ষণে শীর্ষ নেতৃত্ব: আতংকে বিতর্কিতরা
বিশেষ প্রতিনিধি : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর এবছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতেই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আন্দোলনমুখি বিএনপি ও তাদের শরিকরা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে আসবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে তা হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক। প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় উভয় দলই অল আউট খেলবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হলে প্রার্থীকে হতে হবে তৃণমূলে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। আর বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে খুলনায় তেমন নেতৃত্বকেই মনোনয়ন দেয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকরা। এমন পরিস্থিতিতে মনোনয়ন আতংকে ভুগছেন ক্ষমতাসীন দলের খুলনার বুহল সমালোচিত ও বিতর্কিত কয়েকজন সংসদ সদস্য।
জানা গেছে, সিটি নির্বাচনের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল অনেকটাই বেজে উঠছে। সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে ব্যাপক চাপের মুখে রাখতে সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ সরব রাখতে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে। নির্বাচনী দিনক্ষণ যত এদিয়ে আসছে আন্দোলনের মাত্রাও তত বাড়াতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে আওয়ামীলীগ বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনে কোন পক্ষপাতের সুযোগ নেই। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে তারা সব সময় আন্তরিক। শেখ হাসিনা সরকারও চায় একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ইতমধ্যেই এমন বার্তা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে। আগামীর যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যারা নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী হবেন তাদের গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করবে জয় পরাজয়। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য নেতাদের তথ্যানুসন্ধানে জরিপ অব্যাহত রেখেছে বলে দলটির নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সুত্র বলছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচন প্রত্যাশি নেতৃত্বকে অগ্নি পরীক্ষা দিতে হবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। কোন বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হলে পরিস্থিতি প্রতিকুলে চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সারাদেশ থেকে অন্তত ১৪০ থেকে ১৫০ জন বর্তমান সংসদের সাংসদকে সরানো হতে পারে। এদের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও হুইপও রয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা বলছেন। একই চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও।
জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা ইতমধ্যে নির্বাচন প্রত্যাশী নেতাদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিতর্কিত কর্মকান্ড, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণকারী, প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে শেলটার দানকারী এমনকি বিতর্কিত কোন নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হবেনা। অর্থ নয়, জনপ্রিয়তাই হবে একজন নেতার যোগ্যতা। আর এমন ব্যক্তিদের এলাকায় কাজ করার পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, দলটির পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী খুজে বের করার লক্ষ্যে জরিপ চালানো হচ্ছে। যারা দলে এবং নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে যারা নিজের ভাগ্য গড়েননি, যারা এলাকার মানুষের বিপদে পাশে আছেন তাদেরই শেখ হাসিনা নির্বাচনী টিকিট দেবেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের কর্মকান্ড শীর্ষ নেতৃত্বদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে। যারা দলের সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন তারাই আগামী নির্বাচনে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে খুলনা মহানগরীর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ জানিয়েছেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ভালো বোঝেন কাকে মনোনয়ন দিতে হবে। আমাদের ভরসারস্থল শেখ হাসিনা। আমি বিশ^াস করি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সব সময় তিনি মূল্যায়ন করেন।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ^াস বাচ্চু জানান, মনোনয় পেতে জনপ্রিয়তার কোন বিকল্প নেই। নেতাদের কেউ কেউ এখন এলাকামুখী। আগামী নির্বাচনে দলের কাছে তিনি মনোয়ন চাইবেন উল্লেখ করে বলেন, এলাকার মানুষের মাঝে সব সময় পড়ে আছি। আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা পৌছে দিচ্ছি।
আর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা মনে করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতারাই মনোনয়ন পাবেন। আর এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালোই জানেন কাকে মনোনয়ন দিতে হবে। তবে কোন বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় কেউ মনোনয়ন পাবেন না বলে জানান এই নেতা।