বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমকে যুক্ত করেছে। এটিই প্রথম কোনো সেতু যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত যুক্ত হলো। ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন দুই প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের একটি কোম্পানি। গত ১৩ জানুয়ারি সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। এ সেতুর মোট পিলার ১২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৮টি ও ভারতের অংশে ৪টি। সেতু থেকে ২৪০ মিটার রাস্তা নির্মাণ করে রামগড়-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের সঙ্গে এবং ওপারে সেতু থেকে প্রায় ১২০০ মিটার রাস্তা নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লী হয়ে সাবরুম-আগরতলা জাতীয় সড়কে যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের দুই লেনের এ সেতুর দুইপাশে রয়েছে ফুটওয়ে।
এই সেতু দুই দেশের পর্যটন ও বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। ফেনী সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। আগে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল কলকাতা। মৈত্রী সেতুর ফলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব এখন ১০০ কিলোমিটারেরও কম।
এসব কারণে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু দুই দেশের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে। এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এই সেতুর ফলে ত্রিপুরার তথা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধন একদিকে যেমন সমৃদ্ধির পথে আছে, তেমনি দুই দেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে।
ক‚টনৈতিকভাবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক, যা গত ৫০ বছরে চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে, তাকে একটি ধারাবাহিকতার মধ্যে নিয়ে আসার সফলতা দেখানোর ব্যাপারে দুপক্ষই আগ্রহী ছিল। আমরা মনে করি, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি দৃষ্টান্ত। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের মানুষকে পরস্পরের মূল্যবোধসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, বাড়াতে হবে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। তবেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও আন্তরিক ও দৃঢ় হবে।