জন্মভূমি ডেস্ক : রাজধানীর পুরান ঢাকায় একটি ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়। যাদের কাজ কেউ মোটা অংকের টাকা নিয়ে ইসলামপুর এলাকায় ঢুকলে প্রথমে তারা শনাক্ত করে। পরে সেই ব্যক্তির পিছু নিয়ে প্রথমে তাকে ধাক্কা মারে৷ পরে উল্টো ভুক্তভোগীকে ফাঁদে ফেলতে তার সাথে তর্ক শুরু করে। এই সুযোগে আরেকজন সেই ব্যক্তির টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়। এই কাজটি তারা করে তিনজন মিলে। একজন ধাক্কা দেয়, একজন রেকি করে এবং অপরজন টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেয়। চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি।
গত ২৬ মে ইসলামপুরে এক ব্যবসায়ীর কর্মীকে ধাক্কা মেরে তার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয় চক্রটি। পরে তিনি মামলা করলে তদন্তে নামে ডিবি। অবশেষে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে লালবাগ ডিবি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, মূল অপারেশনাল সংগঠক রেজাউল করিম এবং রেকিকারী দলের কামাল হোসেন। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া টাকার মধ্যে নগদ সাড়ে নয় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুরান ঢাকায় বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ী খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেনদেন করেন। মোটা অঙ্কের টাকা পরিবহনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে তারা পুলিশকে জানান না।
মশিউর রহমান বলেন, পুরান ঢাকার এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করে থাকেন। ডাকাত-ছিনতাইকারীরা এই হুন্ডির ব্যবসায়ীদের টাকা সাধারণত টার্গেট করে। কারণ হুন্ডির টাকা লেনদেন করা আইনত স্বীকৃত না। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ সময় বিষয়টি পুলিশকে জানায় না। কিন্তু ডাকাতদের এই অপতৎপরতায় কখনো কখনো বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এই ডাকাতির মূল মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। তিনি কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করে এই সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম একসময় পুরান ঢাকাতেই ব্যবসা করতেন। তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কিল ঘুষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে আসছিল।
পুলিশ জানায়, ডাকাতির কাজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা কম দামের বাটন ফোন নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ করে। ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম ভেঙে নদীতে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে যায়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৬ মে কদমতলী খেজুরের গলিতে অবস্থিত মসলা এন্টারপ্রাইজের কাছাকাছি আড়ত থেকে ৭০ লাখ টাকা একটা নীল রংয়ের স্কুল ব্যাগে ঢুকিয়ে তাঁতি বাজারের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা দেন ‘মা বুলিয়ান অ্যান্ড সিলভার জুয়েলার্স’ এর কর্মচারী মহিউদ্দিন। তিনি ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছামাত্র একজন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা দিলেন কেন। টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন ‘সরি’ বলে ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওঁৎ পেতে থাকা আরও ৭/৮ জন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রচণ্ড কিল, ঘুষি মারতে থাকে। একটা পর্যায়ে তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং টাকাভর্তি ব্যাগটি টেনেহেঁচড়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরে তিনি থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।