
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী মোহনায় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। অবৈধ ছোট ফাঁসের বেহেন্দি জাল দিয়ে মাছের পোনা আহরণ করায় ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ। শুধু তাই নয়, এ কারণে মারা যাচ্ছে সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যসহ বঙ্গোপসাগরের মৎস্যকূল।
জেলেরা জানায়, পিরোজপুর, তুষখালি, মঠবাড়িয়া, বরগুনার পাথরঘাটা, চরদুয়ানী, পদ্মা স্স্নুইজ, মোরেলগঞ্জ, সাপলেজা, শরণখোলার রাজেশ্বর, বগি, রাজাপুর, সোনাতলা, খুড়িয়াখালী গ্রামসহ অন্যান্য এলাকার কতিপয় জেলেরা এলাকার অসাধু লোকের সহযোগিতায় এ কাজ করছে। বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এমনটা করা হয় বলেও জানান জেলেরা। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কালামিয়া ভারানী হতে শ্যালা নদীর মোহনা, কটকা, দুধমুখি নদীর মোহনা, দুবলারচর, ডিমেরচর, শুকপাড়া, বাদামতলা, ছাপড়াখালিসহ বনের বিভিন্ন নদী ও খালের মোহনায় ছোট ফাঁসের নিষিদ্ধ বেহেন্দি জাল (বাঁধা জাল) পেতে চিংড়ি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরছে তারা। এতে চিংড়ি মাছের সঙ্গে আটকা পড়ছে মণকে মণ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। জেলেরা জাল টেনে শুধু টাইগার চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের বড় চিংড়ি মাছ রেখে অন্য মাছের পোনা নদীতে ফেলে দেয়। প্রতি বছর ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত জেলেরা চিংড়ি ধরার নামে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি অমাবশ্যা পূর্ণিমায় শত শত জেলে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে অবাধে ছোট ফাঁসের বেহেন্দি জাল দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরছে জেলেরা। এতে মারা পড়ছে কোটি কোটি অন্য প্রজাতির মাছের পোনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেরা জানান, এলাকার কতিপয় লোকের ছত্রছায়ায় ও বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এ ধরনের কর্মকান্ড চলমান। সুন্দরবনের নদী, খালে ও সাগর মোহনায় অবাধে নিষিদ্ধ বেহেন্দি জাল বছরের পর বছর চালু থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে তাদের বড় একটি স্বার্থ রয়েছে।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী মোহনায় ও সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ফ্রি-স্টাইলে নিষিদ্ধ বেহেন্দি জাল দিয়ে ধ্বংস করছে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ। এর সঙ্গে বনবিভাগের এক শ্রেণির অসাধু বনরক্ষীরা জড়িত রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবনসহ এই অঞ্চলের নদনদীতে কোনো মাছ পাওয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের নদীতে নিষিদ্ধ বেহন্দি জাল পাতার খবর তাদের জানা নেই। কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশস্ত করেন তিনি।
জানতে চাইলে সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন্য সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, বেহেন্দি জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে ও এর সঙ্গে বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত