
আড়ৎদার আলমগীর ও শামীমকে কৃষক সাজানো হয়েছে
তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিককে হুমকি
নওয়াপাড়া অফিস : অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকের ধান ফেরৎ দিয়ে দেদারছে ব্যবসায়ির ধান কেনা হচ্ছে। গত রোববার সকালে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দুই জন সাংবাদিককে মামলার হুমকি দিয়েছে গুদাম কর্মকতা অসীম কুমার মন্ডল।
আদ্রতা বেশি দেখিয়ে গত ২৭ মে উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের বর্ষিয়ান কৃষক শামসুর রহমান(৭০)এর ধান গুদামের সামনে চার দিন ফেলে রাখা হয়। তিনি পরে ওই ধান ফেরৎ দিয়ে যান। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরে ও থেমে নেই ব্যবসায়ির কাছ থেকে ধান কেনা।
আরো অনেক কৃষকের ধান ফেরৎ দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে গুদাম কর্মকর্তা ব্যবসায়ির ধান গ্রহণ করছেন। এ ধরনের তথ্য পেয়ে ও কৃষকের সুনিদৃষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার বেলা ১১টায় স্থানীয় দুই জন সাংবাদিক খাদ্য গুদামে তথ্য সংগ্রহ করতে যায়। এসময় গুদাম কর্মকর্তা স্থানীয় ওই দুইজন সাংবাদিককে মামলার হুমকি দেন। এছাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকও সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান হচ্ছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবেন বলে হুমকি দেন।
রবিবার সকালে নওয়াপাড়া খাদ্য গুদামে যেয়ে দেখা যায়, নছিমনে করে ব্যবসায়ির ধান আনা হচ্ছে। এ সময় নসিমন চালকের কাছে ধানের মালিকে নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধান চাকই বাজারের ধান ব্যবসায়ি শামীম হোসেনের। আমি নিয়মিত তার ধান পরিবহন করি।
এসময় গুদামের সামনে অপেক্ষারত কৃষক হাবিবুর রহমান, হারুন মোল্যা, বাবুল হোসেন ও নাজিম উদ্দিন জানান তাদের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে ব্যবসায়ি শামীম খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছে। এ জন্য তাদের কিছু টাকাও দেওয়া হয়। তাদের ব্যাংক হিসাব কোথায় খোলা তার সঠিক উত্তর তারা দিতে পারেনি।
সিদ্দীপাশা ইউনিয়ন এর ৫নং ওয়ার্ডের নছিমন চালক রাজ্জাক বলেন,আমি আলমগীরের আড়ৎ থেকে ৭৫ বস্তা ধান নিয়ে খাদ্য গুদামের গলির মধ্যে খামাল দিয়ে রেখে এসেছি। আলমগীর হোসেন নওয়াপাড়া বাজারের একজন বড় ব্যবসায়ি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ি আলমগীর হোসেন বলেন, আমি একজন চাষী। আমার ক্ষেতের ধান কৃষি কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য গুদামে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি।
ধোপাদী গ্রামের ময়না বেগম আড়ৎ থেকে কমদামে ধান কিনে কৃষি কার্ডেও মাধ্যমে খাদ্য গুদামে বিক্রি করতে এসছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ছিলাম। আমার কৃষি কার্ড আছে এবং কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে।’ সকালে আড়ৎ থেকে ধান কিনেছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু ধান কম পড়ে ছিল তাই আড়ৎ থেকে যোগাড় করে নিয়ে এসেছি।’
নওয়াপাড়া সরকারি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা অসিম কুমার মন্ডল বলেন, এখানে কৃষিকার্ড ও ওই কৃষকের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য কারো ধান কেনার সুযোগ নেই। দুই জন সাংবাদিক কৃষকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে তাদের নাজেহাল করছিলো। আমি তাদের কোন হুমকি দেয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, যথাযথ নিয়মে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।সাংবাদিকরা সরকারি কাজে বাঁধার সৃষ্টি করছে এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কৃষি অফিসের পাঠানো তালিকা দেখে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছেন। এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ি কৃষকের কার্ড ব্যবহার করে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধানচাল সংগ্রহ অভিযান কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।