মহামারী করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানবিক বিবেচনায় নগরীতে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিক্সার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। এ অবস্থায় শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচল করছে। ওই সব রিক্সার চালক ও মালিকদের বিভিন্ন সময়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে জরিমানা গুণতে হচ্ছে। কোথাও-কোথাও অসাধু পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজিরও শিকার হতে হচ্ছে।
২০১০ সালের শেষের দিক থেকে পায়ে চালিত রিক্সার বদলে ব্যাটারি চালিত রিক্সার চলাচল শুরু হয়। দিনে-দিনে যার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এর সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজারে দাঁড়ায়। তখন গোটা শহরে পায়ে চালিত রিক্সা ১শ’টি পাওয়াও কঠিন ছিল। ব্যাটারি চালিত রিক্সার দাপটে বিভিন্ন সড়কে যানজট ও ছোট-খাটো দুর্ঘটনা প্রায় নিয়মিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কেসিসি কর্তৃপক্ষ ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
এরপর প্রায় ৯৫ শতাংশ রিক্সা থেকে ব্যাটারি অপসারিত হয়। গত মার্চ মাসে করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ব্যাটারি চালিত রিক্সার আনা-গোনা শুরু হয়। তবে, সংখ্যা বেশি নয় বলে জানা গেছে।
কেসিসি’র লাইসেন্স শাখার একটি সূত্র জানান, নগরীতে নিবন্ধনভুক্ত রিক্সার সংখ্যা ১৭ হাজার। রিক্সা মালিকরা প্যাডেল চালিত রিক্সা হিসেবেই লাইসেন্স নবায়ন করেন। এরপর তাদের কেউ-কেউ ব্যাটারি সংযোগ করেন।
নগরীর জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক, ফরেস্ট ঘাট, ২ নং কাস্টম ঘাট, সার্কিট হাউস এলাকা, সাউথ সেন্ট্রাল রোডের মন্দির গলি, বড় মির্জাপুর, মিয়াপাড়া পাইপের মোড়, নতুন বাজার ওয়াপদা রোড, গল্লামারি মোড়, বানরগাতি, বসুপাড়া রোড, লবনচরা, দক্ষিণ টুটপাড়া, পশ্চিম টুটপাড়া ময়ুরবাড়ী খালপাড়, খালিশপুর, দৌলতপুরসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ’ রিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। প্রত্যেক গ্যারেজে ৩০, ৫০, ৬০ টি থেকে শুরু করে ১শ’টি পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত রিক্সা রয়েছে। এছাড়া অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে দু’-একটি রিক্সা তৈরি করে চালকদের কাছে ভাড়া দিয়ে থাকেন। রিক্সা মালিক ও চালকদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেসিসি’র লাইসেন্স শাখা ও চালকদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিটি কর্পোরেশন কর্র্তৃপক্ষ অবৈধ রিক্সার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এর আগে রিক্সা থেকে ব্যাটারি অপসারণের জন্য মাইকিং শুরু হলে রিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। তারা বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। কিন্তু তাদের দাবিতে কর্তৃপক্ষ সাড়া দেন নি। অভিযানে ব্যাটারি চালিত রিক্সার তার কেটে দেয়া, ব্যাটারি খুলে ফেলা এবং বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকোকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে রিক্সার ব্যাটারির চার্জিং পয়েন্ট বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফলে, ফেরৎ আসে পায়ে চালিত রিক্সা।
রিক্সার মালিক ও চালকদের মধ্যকার সূত্রসুলো জানান, অভিযানে অনেকের রিক্সার ব্যাটারি ও মোটর ভেঙ্গে দেয়া হয়। একজন রিক্সা গ্যারেজের মালিক বলছিলেন, তার ৫৩ টি রিক্সার মধ্যে ২৬ টির ব্যাটারি ভেঙ্গে দেয়া হয়। একেকটি রিক্সায় ২০-২১ হাজার টাকার ব্যাটারি ছিল। কঠোর অভিযানে রিক্সা মালিকরা ব্যাটারি অপসারণ করেন। এখন রিক্সা ভাড়া নেয়া চালকদের সংখ্যা কমেছে। বিভিন্ন গ্যারেজে পায়ে চালিত রিক্সা পড়ে থাকে। মোটর চালিত রিক্সাগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন অলি-গলি দিয়ে চলাচল করে। সন্ধ্যার পর প্রধান-প্রধান সড়কেও আনা-গোনা বাড়ে।
কেসিসি’র সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার ফারুক হোসেন তালুকদার দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, মহামারী করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে গরীব মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকে আপাতত সরে এসেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও অভিযান শুরু হবে।
রিক্সা-ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মানিক মিয়া বলেন, ডাকবাংলা মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, শিববাড়ী মোড়, ময়লাপোতা, নিরালা, গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা, কেসিসি মোড়, খুলনা সদর থানার মোড়, সাতরাস্তা মোড়, জোড়াগেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারি চালিত রিক্সা পেলেই ট্রাফিক পুলিশ আটক করছে। তারা অশালীন ভাষায় বকা দেন। এরপর একদিন আটকে রেখে প্রতি রিক্সা থেকে ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বিভিন্ন স্থানে টহল পুলিশ, থানা ও ফাঁড়ির কতিপয় অসাধু সদস্য রিক্সা চালকদের ধরে ৫০-১শ’ থেকে দু’শ টাকা হারে চাঁদা আদায় করেন। কোনা-কোনো ট্রাফিক সদস্যও একই কাজ করেন। প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (পিপিএম) দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, নগরীতে যানজট ও ছোট-খাটো দুর্ঘটনা রোধে গত মার্চ মাস থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯শ’৫৫ টি অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ভ্যান আটক করা হয়। ওইসব বাহনের চালকদের মধ্যকার প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বয়স্ক ব্যক্তি ও দরিদ্রদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয় নি। তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে। কতিপয় অসাধু ট্রাফিক সদস্যের বিরুদ্ধে রিক্সা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। অভিযোগ পেলে এবং সত্যতা মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে