ডিলারের অভাবে ১৪ স্পটে বিক্রি বন্ধ
জন্মভূমি রিপোর্ট : নগরীর দৌলতপুরের মহেশ^রপাশা কালীবাড়ী বাজার মোড় এলাকায় মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ওএমএস ডিলারের দোকান থেকে স্বল্প মূল্যে খাদ্য পণ্য কিনতে ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানের নিম্ন আয়ের মানুষেরা সমবেত হন। দোকানটিতে সপ্তাহে একদিন এ কার্যক্রম চলে। প্রত্যেক ক্রেতার পাঁচ কেজি করে চাল ও পাঁচ কেজি করে আটা কেনার ব্যবস্থা থাকলেও কেউ চার কেজির বেশি কখনই পাননা। দিনের শুরুতে চার কেজি হারে চাল ও আটা বিক্রি হলেও বেলা বাড়ার সাথে-সাথে পরিমাণ দুই/তিন কেজিতে নেমে আসে। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বিক্রি কার্যক্রম চলার সময়সীমা হলেও সাড়ে ১২ টা থেকে একটা বাজলেই সংশ্লিষ্টরা বলেন, মাল নেই। শেষ হয়ে গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রত্যেক ডিলার একদিন বিক্রির জন্য এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ পান। যা ৪শ’ মানুষের মাঝে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- ওই চাল বিক্রির স্পটে আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ ক্রেতার সমাগম ঘটে। অন্তত অর্ধশত লোক খাদ্য পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ী ফেরেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- ডিলারের উত্তোলন করা খাদ্যপণ্য সম্পূর্ণটা দোকানে বিক্রির জন্য আনা হয়না। যে পরিমাণ আনা হয় সেখান থেকেও দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সোমবার সকালে সেখানে সিরিয়াল পাওয়া নিয়ে নারীদের মধ্যে হট্টগোল হচ্ছিল। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডে ৯৭ জন ডিলারের প্রতিদিন পালাক্রমে ২০ টি স্পটে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর ডিলারের সংখ্যা কমে ৯০ জনে দাড়িয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে অন্য সাত জন ডিলারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ সাময়িক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যে কারণে ১৪ টি স্পটে পণ্য বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে। ডিলারগণ খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ডেলিভারি অর্ডার গ্রহণ করেন। এরপর বৈকালী এলাকার সিএসডি খাদ্য গুদাম থেকে চাল-আটা সংগ্রহ করেন। শুক্র, শনি এবং সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বিক্রি কার্যক্রম চলে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, দৌলতপুর থানাধীন মহেশ^রপাশা কালীবাড়ী বাজার এলাকার ওই স্পটে সপ্তাহে যেদিন খাদ্য পণ্য বিক্রি করা হয়, সেদিনই দুপুরের মধ্যেই স্টক শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। পারুল নামে এক নারী উপস্থিত ক্রেতাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে সিরিয়ালের ব্যবস্থা করেন। যদিও খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ ব্যাপারে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি অপ্রয়োজনীয়। দেশের যে কোনো স্থানের নাগরিক যে কোনো স্পট থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। সোমবার সকাল ১০ টার দিকে তিনি সিরিয়াল নিয়ে অনিয়ম করায় নারীদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়েছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই নারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। সেখানকার একজনের অভিযোগ একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন কর্মীও প্রভাব বিস্তার করে বাড়তি পণ্য সংগ্রহ করে গরীব মানুষদের বঞ্চিত করে থাকেন।
মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী অভিযুক্ত ডিলার মহিবুল হক আজাদ সকল দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, দোকানে থাকি না। কর্মচারি কার্যক্রম চালান। যে পরিমাণ লোক হয়, তাতে সকলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।
খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ফুড ইন্সপেক্টর রাশেদ আহমেদ আল রিপন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, অভিযুক্ত ডিলার দোষী হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এর সাথে তদারককারী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা থাকলেও তার ব্যাপারে একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।