বিশেষ প্রতিবেদক
রাস্তার পাশে দোকান। সামনে সারি সারি সাজানো প্লাষ্টিকের বোতল। দূর থেকে দেখে মনে হবে বোতলে রয়েছে সুস্বাদু পানীয়; কিন্তু না। বোতলে রয়েছে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও মোবিলের মত দাহ্য পদার্থ। রয়েছে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত এলপি গ্যাস। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
লাইসেন্স ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইন-১৯০৮ অনুযায়ী খোলাবাজারে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া খুলনার সর্বত্র অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ঢাকার নিমতলী বা চট্টগ্রামের সিতাকুÐুর মত ভয়াবহ অগ্নিকাÐ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর রুপসা, টুটপাড়া, বাগমারা, নিরালা, সোনাডাঙ্গা, বয়রা, খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেটসহ প্রত্যেকটি উপজেলার হাট-বাজার, মুদি দোকান হতে শুরু করে চায়ের দোকান, রিচার্জ/লোডের দোকান, প্লাস্টিক, টিন, রড়-সিমেন্টের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পেট্রোল পাম্প থাকলেও সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পেট্রোল বা ডিজেল। যেকেউ ইচ্ছা করলেই সেগুলো কিনতে পারছেন। হাতের নাগালে খোলা বাজারে অনুমোদনহীন দোকান থেকে পেট্রোল কিনে দুর্বৃত্তরা ঘটাতে পারে যেকোনো অঘটন। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, বিস্ফোরক লাইসেন্স নিতে অনেক ঝামেলা ও টাকা খরচ হয়। তাই লাইসেন্স করিনি।
আইন বলছে, ২০০৩ সালের দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কেউ লাইসেন্সবিহীন বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করলে তিন বছরের কারাদÐ, অর্থদÐসহ ওই প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল বাজেয়াপ্ত করার বিধান আছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় বিস্ফোরক লাইসেন্স গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫০ এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন প্রায় দেড়শ’। খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১০টি পর্যন্ত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার এবং পেট্রোল বা ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন।
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রির জন্য বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষুাগার রাখার নিয়ম রয়েছে। একজন ব্যবসায়ী এই র্কুগুলো পূরণ করলেই শুধু পেট্রোল জাতীয় দাহ্যপদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দেখা যায় না।
পাইকগাছার লস্কর ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ী বলেন, পেট্রোল পাম্প অনেক দুরে। গ্রামের মধ্যে তেল শেষ হয়ে গেলে মানুষ বিপদে পড়ে। তাই আমি জ্বালানী তেল বিক্রি করছি। আর এসব বিক্রি করতে লাইসেন্স লাগে, তা আমার জানা ছিল না।
খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক রিফাত-ই-আশরাফ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, দপ্তরে জনবল সংকটসহ পরিবহন সংকট রয়েছে। এত বড় বিভাগ দেখভালের জন্য মাত্র ৭/৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আমরা প্রতিনিয়তই মনিটরিং করি। তবে পরিবহন ব্যবস্থার সংকট থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের মধ্যে মনিটরিং যথাযথ হয়ে ওঠে না।
খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক, মো: ছালেহ উদ্দিন বলেন, দাহ্যপদার্থ, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা, পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। যত্রতত্র এলপি গ্যাস, পেট্রোল বা দাহ্যপদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাÐসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।