জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদাই মানুষের জয়গান গেয়েছেন। এছাড়া তিনি ‘বাঙালির আত্মপ্রকাশে দুর্দান্ত প্রেরণা’ ছিলেন উল্লেখ করে তার নাতনি খিলখিল কাজী বলেছেন, ‘তার (কবি নজরুল) লেখনি সবসময় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এত বড় অসাম্প্রদায়িক কবি মনে হয় পৃথিবীতে আর আসেনি। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শেষে তিনি একথা বলেন।
নজরুলের রচনাবলি জাতীয় সম্পদ হওয়া সত্বেও আজও ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় অনুদিত হয়নি। এ নিয়ে নিজের আক্ষেপ তুলে ধরে খিলখিল কাজী বলেন, শুধু কবরে এসে ফুল দিলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় না। তার যে অসমাপ্ত কাজগুলো রয়েছে, সেগুলো সকলের দ্বায়িত্বে সারাবিশ্বের মাঝে পৌঁছে দেয়ার একটা ব্যাপার আছে। এটি রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব এবং এই কাজটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। নজরুলের গ্রন্থগুলো ইংরেজিসহ সারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় অনুবাদ করে তাদের পৌঁছে দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্রোহী সত্ত্বা যে উৎপীড়িত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষের কথা বলেছে; আজকে পৃথিবীতে যে হানাহানি, জাতিগত বিভেদ চলছে… এই সময়ে কবির লেখাগুলোকে যদি অনুবাদ করে সারা পৃথিবীতে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে সেটিই হবে আজকের জন্য বড় কাজ।’
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাসদ, আরবিকালচার সেন্টার- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল চর্চা কেন্দ্র-বাঁশরী, বাংলাদেশ কৃষকলীগ, বাসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নজরুলের সাম্প্রদায়িক চেতনা চিরদিন বাঙালির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ এখনও ডালপালা বিস্তার করে যাচ্ছে, সেই বিষবৃক্ষকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে।’
এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, কবির প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল। সেই শ্রদ্ধাবোধের জায়গা থেকে কবিকে ভারত থেকে নিয়ে এসে জাতীয় কবি উপাধিতে ভূষিত করেন। কবি নজরুল এখনও প্রাসঙ্গিক আছেন এবং ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিক থাকবেন। তার বিদ্রোহী কবিতা স্বাধীনতা যুদ্ধেও যেমন মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, তেমনি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করে। আজকে গণতন্ত্রের ঘাটতির যুগে, কথা বলার স্বাধীনতা চর্চার কারণে নির্যাতন নিপীড়নের এই যুগে এবং সর্বোপরি চারদিকে একটা ভয় ও অন্ধকারের যুগে আমাদের জাগিয়ে তোলে কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা ও গান আমাদের সকল দুঃসময়ে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও ক্রান্তিকালে অনুপ্রেরণা উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবঙ্গ শেখ মুজিবুর রহমানও তার সংগ্রামী জীবনে তার কবিতায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন, অসমাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার কথা বলেছেন। আবার একইসঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ফলে তার কবিতা ও গানে বহুমাত্রিক দর্শনের সম্মিলন ঘটেছে।