
হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের কাইচদহ ফসলি মাঠের প্রায় ৩শ একর জমির ফসল ঘরে উঠানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কাইচদহ ফসলি মাঠ’র প্রায় ৩শ একর জমিতে রয়েছে ছোট,বড় অসংখ্য মাছের ঘের। সমন্বিত এসব মাছের ঘেরে ধান চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ হয়। সেই সাথে অধিকাংশ ঘের পাড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি বাগান। কিন্তু এ ফসলি মাঠে যাতায়াতের একমাত্র পথ বন্ধ করার পায়তারা করছে স্থানীয় শেখহাটি শেখপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন মাষ্টারের ছেলে আজাদ শেখ (৪৫)।
রোববার (১১ জুন) সকালে সরজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, কাইচদহ বিলের পাকা সড়কের পাশে রয়েছে স্থানীয় শেখহাটি শেখপাড়া গ্রামের আজাদ শেখ’র মাছের ঘের। এ ঘের পাড়ের রাস্তা দিয়ে কাইচদহ বিলের বিভিন্ন লোকের প্রায় ৩শ একর জমির ঘের’র মাছ, ধান ও ঘের পাড়ের সবজি ও অন্যান্য মালামাল আনা নেয়া করা হয়। একাধিক ঘের মালিক ও স্থানীয়রা জানান, এলাকার সকলের ফসল ঘরে তোলার সুবিধার জন্য আজাদ শেখ’র সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তার ঘেরপাড় দিয়ে রাস্তা করা হয়। আজাদ শেখ’র দেয়া শর্ত মোতাবেক শেখহাটি শেখপাড়া গ্রামের জিকু শেখ তার নিজের ১৮ কাঠা জমি দেন আজাদ শেখকে। একই ভাবে আরোও কয়েকজন আজাদ শেখ’র ঘের সংলগ্ন জমি দেন আজাদ শেখকে ঘের করার জন্য। বিনিময়ে তারা আজাদ শেখ’র ঘের পাড় দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা করে নেন। রাস্তা নির্মানের জন্য জিকু শেখ ব্যক্তিগত প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয় করেন। ওই রাস্তা দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে মানুষ তাদের ঘের’র মাছ,জমির ফসল ও সবজি আনা নেয়া করে আসছে। ফসল আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত নছিমন, করিমন ও গরুর গাড়ীতে রাস্তা ভেঙ্গে গেলে আবার তা- জিকু শেখ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সংস্কার করে আসছেন।
সম্প্রতি পাকা রাস্তার সাথে ওই সড়কের মুখে খুপড়ি ঘর তুলে রাস্তা বন্ধ করার পায়তারা করছেন আজাদ শেখ। এলাকার লোকজন তাকে নানা ভাবে অনুরোধ করলেও তিনি কারো কোন কথায় কর্ণপাত না করে ঘর তোলার কাজ অব্যহত রেখেছেন। নিরূপায় হয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা রোববার (১১জুন) নড়াইল সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখহাটি শেখপাড়া গ্রামের জিকু শেখ ক্ষোভের সাথে জানান,কাইচদহ বিলে তার প্রায় ৭৭ বিঘা জমিতে ঘের রয়েছে। এ বিশাল ঘের’র মাছ, ধান ও সবজি আনা নেয়া করেন আজাদ শেখ’র ঘের পাড়ের রাস্তা দিয়ে। তিনি নিজের ও অন্যান্য লোকের সুবিধার জন্য প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করে ঘের পাড় বেঁধে রাস্তা করেছেন। ওই রাস্তা দিয়ে কাইচদহ বিলের অর্ধেক জমির ফসল ঘরে উঠে। হিংসাত্নক হয়ে রাস্তার উপর ঘর তুলে রাস্তা বন্ধ করার পায়তারা করছেন আজাদ শেখ। জিকু শেখ আরোও বলেন ওই রাস্তা বন্ধ করা হলে কৃষকরা কোন অবস্থাতেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না। এতে কৃষকরা মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কৃষকদের স্বার্থ সুবিধার কথা ভেবে এবং কৃষিপণ্য দ্রুত ও সহজে পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি।
একই গ্রামের আজিজুর ও জনি জানান, কাইচদহ বিলে তাদের ঘের রয়েছে। এ গ্রামের অনেকেরই ঘের রয়েছে। রাস্তা বন্ধ হলে তারা সকলেই মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আবুল মাষ্টার ও তার ছেলে আজাদ খুবই হিংসুটে। অন্যদের ভালো দেখতে পারেন না। তাই তারা সকলের ক্ষতি করার জন্য এমন জঘন্য কাজ করছেন। পার্শ্ববর্তী কামকুল গ্রামের বাবু শেখ জানান, কাইচদহ ফসলি মাঠে তার ৫ বিঘা জমিতে ঘের রয়েছে। আজাদ শেখ রাস্তা বন্ধ করে দিলে সকল চাষাবাদ বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এ গ্রামের মাহাবুব ও তালেব জানান, তাদের ৭ বিঘা করে পৃথক পৃথক ঘের রয়েছে। আজাদ শেখ’র ঘের পাড়ের রাস্তা দিয়ে তারা নছিমন করিমনে মালামাল পরিবহন করেন। রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে ঘের’র কার্যক্রম বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তারা সমুহ ক্ষতি হতে পরিত্রান পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কাইচদহ গ্রামের মুক্তারের ৬ বিঘা জমিতে ঘের রয়েছে। তিনি বলেন শেখহাটি শেখপাড়া গ্রামের আবুল মাষ্টার ও তার ছেলে আজাদ শেখ দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ। তারা রাস্তার জন্য যে পরিমান জমি ছেড়েছে, সম্মিলিত ভাবে তার চেয়ে বেশি পরিমান জমি তাদেরকে দিয়ে নিজেদের টাকায় রাস্তা করে নেয়া হয়েছে। জিকু শেখ সবচেয়ে বেশি জমি দিয়েছে। প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা করে দিয়েছে জিকু শেখ। জিকু শেখ সহ অন্যান্যদের জমি নিয়ে সেই জমিতে ঘের করেছে আজাদ শেখ। বিনিময়ে তার ঘেরপাড় দিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ দিয়েছে। রাস্তাটি তিনি নিজেও ব্যবহার করেন। রাস্তার মুখে তার জায়গা থাকায় বিলের সকল চাষীকে জিম্মি করে সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে সকলের সাথে প্রতারনা করে সেই রাস্তা বন্ধ করার পায়তারা করছে। এটা জঘন্য অপরাধ। তিনি সরজমিন তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি। আজাদ শেখ’র নিকট রাস্তা বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি তিনি বলেন, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নিজের জায়গায় ঘর তুলছেন। জমির বিনিময়ে রাস্তার জায়গা ছেড়ে দিয়ে সেই রাস্তার উপর ঘর তুলছেন কেন ? এমন প্রশ্নে তিনি নির্বাক হয়ে এ বিষয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এলাকার সচেতন মহলের দাবি কোটি কোটি টাকার ফসল ঘরে তোলার স্বার্থে এবং দ্রুত বাজারজাত করার স্বার্থে রাস্তাটি উন্মুক্ত রাখা হোক। নড়াইল সদর থানার ওসি ওবাইদুর রহমান এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বিকার করে বলেন, সরজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি টিপু সুলতানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।