হুমায়ূন কবীল রিন্টু, নড়াইল : নড়াইলে বেশ কয়টি এতিমখানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির,অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী অনুদান দেয়া হয় ১০৫ জনের। অথচ কাগজে কলমে প্রায় ২শ’ জনকে দেখিয়ে চলছে এতিমখানা ব্যবসা। বাস্তবে ২৫ জন এতিম নেই নড়াইলের সীমানন্দপুর এতিমখানায়। অথচ প্রতিবছর ১শ’ ৫ জনের জন্য বরাদ্দকৃত ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগই চলে যায় এতিমখানার সুপার ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের পকেটে। জেলা প্রশাসককে সভাপতি বানিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে চলছে প্রতারণা আর সরকারী অর্থ লোপাট ব্যবসা। অথচ যে কয়জন দরিদ্র এতিম শিশু থাকে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে কেবলই আলু ভর্তা আর ডাল। আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তার জুটছে না ঠিক মত। ভয়ে এতিম শিশুরা কোন অভিযোগ দিতে চান না। কেউ গেলে কর্তৃপক্ষের শিখিয়ে দেয়া কথা বলে। তবে কয়েকজন গোপনে স্বীকার করেছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপক অনিয়মের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে স্থাপিত এই এতিমখানাটি জেলার প্রাচীণতম। শুরুতে এতিম শিশুদের কল্যাণার্থে যাত্রা শুরু হয় মাওলানা মকবুল হোসেন এর মাধ্যমে। তিনি মারা গেলে তারপর থেকে হাল ধরেন চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান। তার ছেলে রকিবুল ইসলামকে নামমাত্র সুপার বানিয়ে এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোরা করে নেয় বলে গুঞ্জন আছে। এছাড়া চন্ডিবরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ভূইয়া আজিজুর রহমান যিনি নিজের নামেই পাশে গড়ে তুলেছেন ভূইয়া আজিজুর রহমান বালিকা এতিমখানা। সেখানের সুপার আব্দুল কাদের। এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা সংশ্লিষ্টরা উত্তোলন করে একই কায়দায় ভাগবটোয়ারা করে নেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে ১০৫ জন এতিমের জন্য প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা করে মাথা পিছু অথাৎ ১বছরে ২৪হাজার টাকা করে প্রতিজন এতিমের জন্য সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে দেয়া হয়। প্রতিবছর দুইবার অনুদানের অর্থ প্রদান করা হয়। বছরে দেয়া হয় ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ১০৫ জনের স্থলে দ্বিগুন এতিম থাকার কথা ২১০ জন। বাস্তবে পাওয়া গেলো ৩০ জন। বছরের পর বছর এতিমদের নামে অর্থ আত্মসাৎ হলেও রহস্যজনক কারণে সমাজসেবা অফিসের তদারকি নেই।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই এতিমখানায় বাচ্চাদের নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হয়। মাছ দেয়া হয় না। মাসে একদিন পোল্ট্রি মুরগির ছোট এক টুকরা দেয়। বাকি দিনগুলোতে ডাল আর নিম্নমানের তরকারী। এদিকে জেলা প্রশাসক সভাপতি হওয়ায় এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দের বাইরে টি আর, কাবিখা এবং প্রশাসনের অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে থাকে এতিমখানাটি। জেলা প্রশাসক সভাপতি থাকায় এলাকার লোকেরা এতিমখানার অনিময় নিয়ে কোন কথা বলতে সাহস পান না।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বলেন, আমি তো ওটার দ্বায়িত্বে নাই, ওটার সভাপতি ডিসি। আমি অসুস্থ থাকায় গত ৫-৬ মাস খবর নিতে পারি না। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দায় আছে, তাই সবকিছু ভালো করার চেষ্টা করছি।
সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উত্তম সরকার বলেন, আমরা যখন পরিদর্শনে যাই তখনতো ক্যাপিটেশন পাওয়ার সকল আবাসিক ছেলেই উপস্থিত থাকে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি এ বিষয়টি এখনো জানিনা। তবে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।