
নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ওই বিদ্যালয়েরই সহকারি শিক্ষক মিলন অধিকারী। এ বিদ্যালয়ের সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম সাহেব ও প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ মন্ডল বেশ আগেই প্রার্থী মিলন অধিকারীর সাথে আপোষরফা করে ফেলেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ মোটা অংকের টাকায় চুক্তি করে মিলন অধিকারী সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিচ্ছেন।
অভিযোগকারি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জুলাই এ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে জানান, আগামী ১৫ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষা নামক নাটক মঞ্চস্থ করে পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করানো হবে মিলন অধিকারীকে। তার জন্য সকল প্রকার কলা কৌশল করা হয়েছে আগে থেকেই। নিয়োগ বোর্ডের কোরামপূরন করার জন্য প্রার্থী মিলন অধিকারীর আপন ভাই নিউটন অধিকারী ও তাদের ঘনিষ্টজন পরিমল বিশ্বাসকে দিয়ে আবেদন করানো হয়েছে। তারা দু’জন মুলত: সহযোগিতা করার জন্য প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে অনেক প্রার্থীকে আবেদন করতে দেয়া হয়নি। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রীতিশ বিশ্বাস একাধিক আবেদনকারিকে হুমকি দিয়ে ও বুঝিয়ে আবেদন করা হতে বিরত রেখেছেন। অবশ্য এসব কিছুতে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সমর্থন রয়েছে। নিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্টদের আগে থেকেই ম্যানেজ করা হয়েছে বলে ব্যাপক গুঞ্জণ উঠেছে। আর সে কারনেই রীতিমত ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রকাশ্যে দুর্নীতি অনিয়ম করে মিলন অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগেই সভাপতি চুক্তিমূল্যের সিংহভাগ অগ্রিম গ্রহন করেন মিলন অধিকারীর নিকট হতে। ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বেপরোয়াভাবে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে আবারও সকল জায়গা ম্যানেজ করে নিয়োগ পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছেন দুর্নীতি পরায়ন সভাপতি ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরী প্রার্থী মিলন অধিকারী। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি ও অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে মিলন অধিকারীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য এ নিয়োগ বোর্ড বসানো হচ্ছে জেনে এলাকার সচেতন মহল নিয়োগ পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম সাহেব গ্রুপ এবং জোটবদ্ধ সচেতন সাধারণ জনগন গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। এ নিয়োগ নিয়ে যে কোন মুহুর্তে দু’পক্ষের মধ্যে অনাকংখিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অভিযোগকারিরা জানান প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি এ নিয়োগ দিতে খুবই তৎপর। তারা জীবনবাজী রেখে নিয়োগ যুদ্ধে নেমেছেন। যে কোন মূল্যে তারা মিলন অধিকারীর নিয়োগ দিয়ে প্রাপ্ত টাকা হজম করতে চান। আর দ্রুতই তাকে যোগদান করিয়ে বেতন-ভাতার জন্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে চান। এর জন্য নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল শীট ও খসড়া রেজুলেশন প্রস্তুত করে পরীক্ষার দিন গুনছেন। সকল কাজ নির্বিঘ্ন করতে নিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ খাম প্রস্তুত রেখেছেন। ওই দিন খাম ধরিয়ে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মিলন অধিকারীকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করে নিজেদের দায় শেষ করবেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগ রয়েছে এর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪টি পদে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। এসব নিয়োগে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে এলাকা উত্তপ্ত হওয়ার পাশাপাশি মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন সহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছিল। কিন্তু সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা আবারও প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে কথিত নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে মিলন অধিকারীকে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় অন্যান্য প্রার্থীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ নিয়োগ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সচেতন মহলের দাবি এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে ফেয়ার পরীক্ষা নিয়ে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হোক। প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ মন্ডল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, যা কিছু করার সভাপতি করছেন। নিয়োগের ব্যাপারে সভাপতি যে সিদ্ধান্ত দেন, তিনি সেটাই বাস্তবায়ন করেন বলে জানান। মিলন অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হবে শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিদ্যালয়ের সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম সাহেব বলেন, বর্তমান সময়ে একটা নিয়োগ দিতে বেশ খরচ হয়। নিয়োগ বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যকে টাকা দিতে হয়। টাকা দেয়ার আগে কেউ সাক্ষর করেন না। তাই খরচের জন্য প্রার্থীর কাছ থেকে কিছু টাকা নেয়া হয়। মিলন অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হবে কি-না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন পরীক্ষায় প্রথম হলে তো তাকে নিয়োগ দিতে কোন বাঁধা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনেক আগে থেকেই সর্বত্র প্রচার হয়েছে তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে মিলন অধিকারীকে নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগ পরীক্ষার আগে এ ধরনের প্রচার বা গুজব খুবই দুঃখজনক।