
হুমায়ূন কবীর রিন্টু, নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার দিকে, এমন সময়ে বিদ্যালয় ফান্ড শূন্য করতে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পারিবারিক কাজ বাদ দিয়ে বিদ্যালয় নিয়ে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছে। বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা শূন্য করতে এবং নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা হালাল করতে সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ-লাখ টাকা রয়েছে তার নিকট। নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে নিয়োগ বাণিজ্যের ওইসব হজম করতে তিনি তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারা বলছেন সভাপতি সেন্টু কালো টাকা সাদা করার কাজে ব্যস্ত আছেন।
অভিযোগ রয়েছে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু আবারও একাধিক পদে নিয়োগ বাণিজ্য করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এলাকার দু’জন বিদ্যানুরাগি এককালীন দাতা সদস্য হওয়ার জন্য বিদালয়ের হিসেবে ২০ হাজার টাকা করে জমা দিলেও তাদের দাতা সদস্য করেননি। বাধ্য হয়ে তারা বিভিন্ন দপ্তওে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অথচ নিয়োগ সহকারি প্রধান শিক্ষক পদ ও চতুর্থ শ্রেণির ৩টি পদে নিয়োগ বাণিজ্য করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এসব পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীদের সাথে ইতোমধ্যে আপোষ রফা চুড়ান্ত করেছেন বলে এলাকায় ব্যাপক গঞ্জণ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ। এ মেয়াদের মধ্যেই যে কোন মূল্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে বদ্ধ পরিকর বিদ্যালয়ের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর তিনি একাধারে এ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল করে সুকৌশলে নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন। রাতের আধারে অতি সংগোপনে আর্থিক লেনদেন হওয়ায় ঘুষ খাওয়ার সুস্পষ্ট কোন প্রমান এলাকাবাসির নিকট না থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিষয়টি বুঝতে কারো বাকি নেই।
জানা গেছে ধূর্ত সভাপতি ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), সহকারি গ্রন্থাগারিক, সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার), অফিস সহকারি, নিরাপত্তাকর্মীসহ আরোও কয়েকটি পদে নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ পকেটস্থ করেন। তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা বলে ওই টাকা নিজের কাছে রাখেন। এলাকাবাসির চাপে যৎ সামান্য টাকা ব্যয় করে বিদ্যালয়ের সামান্য কিছু সংস্কার কাজ করে বাকি টাকা তিনি হজম করে ফেলেছেন। সভাপতির দাদী’র নামে বিদ্যালয়টি’র নামকরণ করা হলেও বিদ্যালয়ে তাদের কোন জমি বা অর্থ দান করার কোন প্রমান মেলেনি। এলাকার মানুষকে বোঝান হতো তাদের জায়গায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত। বিদ্যালয়ের দলিলে দেখা যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিতে বিদ্যালয়টি স্থাপিত। হবখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর সৈয়দ তোর্শিদ তৌহিদ সাহিনসহ আরোও কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ারুল আলম সেন্টু সুকৌশলে প্রায় ৩০ বছর সভাপতির পদ দখলে রেখে বিদ্যালয়ে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। কোন ভোট বা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা ছাড়া কমিটি করেন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে তথ্য চাইলে প্রধান শিক্ষক আবু ছামিন বিশ্বাস সুকৌশলে এড়িয়ে যান। বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ারুল আলম সেন্টু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, এলাকার কিছু মানুষ অহেতুক মিথ্যা বদনাম ছড়াচ্ছে। নিয়োগ স্বচ্ছ ভাবেই দেয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দাতা ভোটার ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে দেখা হবে। নিয়োগ নিয়ে কোন ঘুষ দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। জেলা প্রশাসক মোঃ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন নিয়োগ বাণিজ্য করা জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ দমনে ও জড়িতদের বিরূদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।