হুমায়ুন কবীর রিন্টু ,নড়াইল : নড়াইলে পরিবেশ বিধ্বংসি অবৈধ কয়লা ভাটায় পুড়ছে হাজার হাজার টন কাঠ। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে রমরমা কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির ব্যবসা। নগদ নারায়নে তুষ্ট থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা কুম্ভকর্নেও ঘুম দিয়েছেন। অথচ নিয়মিত মাসোহারা নেয়া ইট ভাটা গুলিতে চলছে বেপরোয়া অভিযান। একের পর এক অভিযানে ইট ভাটা মালিকরা সর্বশান্ত। আর সেখানে প্রকাশ্যেই চলছে কয়লা ভাটা। কারণ হিসেবে জানা গেছে,কয়লা ভাটার যারা প্রকাশ্য মালিক রয়েছেন,তাদের সাথে নেপথ্যে ওই ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন ভদ্রবেশি কিছু নষ্ট মাুনষ। যারা সমাজে নিজেদের বিশেষ পেশার বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেন। মুলত: প্রশাসনকে তারাই নিজেদের বিশেষ পেশার পরিচয় দিয়ে ম্যানেজ করেন।
নড়াইল শহরের অদুরেই চন্ডিবরপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠছে কয়েকটি কয়লার ভাটা। কোনো রকম অনুমোদন ছাড়া সেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এলাকা। ভাটার চারপাশের ছিদ্র দিয়ে কাঠের ধোঁয়া বের হয়। ভাটার পাশে বসবাসকারি জনগন আছেন চরম নির্যতনের মধ্যে। ভাটায় আগুন দিলে কালো ধোয়ায় চারপাশ ছেয়ে যায়। চোখে মুখে কিছু দেখা যায় না। শিশু কিশোর সহ সকল বয়সিরা নি:শ্বাস নিতে কষ্ট পান। ওই এলাকায় কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগি আশংকাজনকহারে বেড়ে গেছে। দুর্ভোগের কথা সবার জানা। তবে প্রতিরোধের নেই কোন ব্যবস্থা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, এলাকার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এলাকার ছোট বড় সব শ্রেণী মানুষের শ্বাসজনিত সমস্যার মাত্রা বেড়েছে। ভাটাশ্রমিককরা তাদের সমস্যর কথা ¯ী^কার না করলেও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে তারা এ কাজ করছেন। নড়াইলের গোয়ালবাথান গ্রামে বাঁশবাগানের মধ্যে গড়ে উঠেছে কয়লা তৈরীর কারখানা। বনজ ও ফলজ গাছ কেটে তা চুল্লিতে দিয়ে সপ্তাহ ধরে পুড়িয়ে তৈরী হচ্ছে কয়লা। পাশের নাওরা, বাধাল গ্রামে চলছে আরো ৪টি অবৈধ কয়লা কারখানা। সদর উপজেলার শালিখা,দত্তপাড়া লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, সারুলিয়া গ্রাম সহ জেলায় প্রায় ২৫টি কয়লা তৈরীর কারখানা চালু আছে।
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামে ইউনুস মীরার জমিতে মোঃ রুমন মীর ৫ চুলা বিশিষ্ট একটি কয়লা ভাটা স্থাপন করেছেন। নাওরা গ্রামে ৬ চুলা বিশিষ্ট আরেকটি কয়লা ভাটা স্থাপন করেছে গোয়ালবাথান গ্রামের বাবন আলীর ছেলে মাখন মীর। একই গ্রামের শিবু খন্দকার বাধাল গ্রামে ১০ চুলা বিশিষ্ট আরোও একটি কয়লার ভাটা স্থাপন করেছেন। যা কিছুদিন আগে এলাকাবসীর অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভেকুদিয়ে চারটি চুলা ভেঙ্গে দেয়া হয়। পরে আবারো কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে স্থাপন করেছে বলে জানা যায়।
একটি কারখানায় সপ্তাহে সাড়ে ৩’শ মন কাঠ পুড়িয়ে সাড়ে ৪ টন কয়লা উৎপাদন হচ্ছে। সপ্তাহে ৯হাজার মন আর মাসে ৩৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এসব কারখানায়। মাসে উৎপাদিত ৫’শ টন কয়লা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। একদিকে বন ধ্বংস হচ্ছে,অন্যদিকে বিষাক্ত ধোয়ায় চাষের জমির ক্ষতি হচ্ছে, শ^াসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় ভুগছে শিশুরা।
গোয়াল বাথানগ্রামের রুমনের কয়লা ভাটা সম্পর্কে জাহেরা বেগম (৪০) বলেন কয়লা ভাটার ধুয়ার খুব দুর্গন্ধ। ধোয়ার গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। নাওরা সীমান্তে মাখন মীর’র ভাটা সম্পর্কে জাবের হোসেন বলেন কাঠ পুড়ানো কয়লা ভাটার মালিকরা প্রভাবশালি। আর তাদের সাথে আরোও কিছু মানুষ জড়িত আছে। ভয়ে কেউ তাদের কিছু বলে না।
বাধাল গ্রামের শিবু খন্দকারের কয়লা ভাটা সম্পর্কে শিফালী খানম (৭০), জামিরোন (৩৮), ইয়াসমীন(৪০), উপস্থিত আরো অনেকে বলেন এ কয়লা ভাটার জন্য আমরা ছোট বড় সকলেই শ^াস কষ্টে আক্রান্ত হচ্ছি। এমনকি আমাদের ছোট বাচ্চারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া আশ পাশের জমিতে আগের মত ভালো ফসল হচ্ছেনা শুধু কয়লা ভাটার জন্য। স্থানীয়রা বলেন বেশ কয়েকদিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট এসে চুলা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। এর আগেও এভাবে চুলা ভেঙ্গেছে । এই ভাটার মালিক শিবু আমাদের বলেছেন তোমরা কতবার অভিযোগ দিবা । আর আমি দেখি টাকা দিয়ে আবার স্থাপন করে নেব, আমার ভাটা চলবে।
নড়াইলের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া নিজেদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে “ম্যানেজ” করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো এটা সম্পুর্ন অবৈধ পদ্ধতি। এর অনুমোধন দেয়ার কোন সুযোগ নাই। এ রকম ধারা আমাদের পরিবেশ সংরক্ষন আইনে নেই। এটা সম্পুর্ন অবৈধভাবে করা হচ্ছে। আমাদের যে লোকবল এবং ব্যাজেট,প্রশাসনিক সহযোগিতা সবকিছু মিলিয়ে রেগুলার মনিটারিং করা সম্ভব না। যার করণে আমরা একবার ভেঙ্গে দেয়ার পরে তারা আবার পুনরায় স্থাপন করে । এটা প্রতিহত করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালি করতে হবে।
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মাদ আব্দুর রশিদ বলেন, ধোয়ায় ফুসফুস-সহ স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। বিভিন্ন ধোয়া ও বায়ূ দুষনের ফলে মানসিক সমস্যা ও হতাশা বাড়ছে। অচিরেই এ কয়লা ভাটা বন্ধ না করলে ওই জনপদের মানুষ মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়বে।
নড়াইলে অবৈধ কয়লা ভাটায় পুড়ছে হাজার হাজার টন কাঠ: জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

Leave a comment