নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে ভ্যান ছিনতাই করতে কিশোর আলিফকে (১৫) হত্যা ঘটনায় মিনারুল বিশ্বাস (২২) ও হৃদয় মোল্যা (২০) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা নিজেরাই খুনে জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। নিহত কিশোর আমিনুল বিশ্বাস ওরফে আলিফ নড়াইল সদর উপজেলার ছোট মিতনা গ্রামের কিনায়েত বিশ্বাসের ছেলে। হত্যা ঘটনায় গ্রেফতার দু’আসামি একই উপজেলার চাচড়া গ্রামের বাহারুল বিশ্বাসের ছেলে মিনারুল বিশ্বাস এবং একই গ্রামের হাফিজুর মোল্যার ছেলে হৃদয় মোল্যা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মারুফ হাসানের আদালতে আলিফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মিনারুল ও হৃদয় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহতের মা রোজিনা বেগম বাদী হয়ে সোমবার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো: রবিউল ইসলাম আরোও জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে আলিফকে বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নেন মিনারুল ও হৃদয়। তারা ওই রাতে আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে অটোভ্যানে ঘোরাফেরা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আলিফকে পান করান। কিছু সময় পর আলিফের ঘুম ঘুম ভাব এলে হৃদয় ভ্যান চালিয়ে বাহিরগ্রাম বাজারে যান। সেখানে ভ্যান চার্জ দেয়ার অজুহাতে সেটি হৃদয়ের মামার বাড়িতে রেখে আসেন। পরে তিনজন হাঁটতে হাঁটতে দেবভোগ এলাকার নুড়িতলা বিল এলাকায় পৌঁছান। সেখানে আলিফ ঘুমিয়ে পড়লে হৃদয় তার পা চেপে ধরেন এবং মিনারুল গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তারা আলিফের মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা নিয়ে মরদেহ পাশের পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। আলিফের নিখোঁজ ডায়েরির পর পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। সন্দেহভাজন হিসেবে মিনারুলকে আটক করলে সে মরদেহের অবস্থান জানায়। তার দেয়া তথ্যে বিক্রিত ভ্যানের ব্যাটারি শহরের মুচির পোল এলাকা থেকে এবং ভ্যানটি হৃদয়ের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করে নড়াইল জেলা ডিবি। তার কাছ থেকে আলিফের এ্যান্ডরয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অভিযুক্তরা জানান, সামান্য কিছু টাকার জন্য তারা আলিফকে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রেখে তারা হৃদয়ের মামার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের পর আল্লাহর ভয় ও অনুশোচনায় তারা বাহিরগ্রাম জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সকালে স্থানীয় বাজারে চা-পান করেন। পরে মিনারুল নিজ এলাকায় ফিরে যান, হৃদয় পালিয়ে গোপালগঞ্জে চলে যান। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই আলম সিদ্দিকী, নড়াইল সদর থানার ওসি মো. সাজেদুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর রাত ৮টার পর অটোভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন কিশোর আলিফ। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। দু’দিন পর রোববার (৫ অক্টোবর) তার মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ অভিযানে নামে। সন্দেহভাজন মিনারুলকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করলে তার দেখানো জায়গা থেকে দেবভোগ নুড়িতলা বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে আলিফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত