হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার এসআই আসাদুজ্জামানের বিরূদ্ধে একটি বীরনিবাসের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা সহ মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে অশালীন আচরণ ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ দিন ধরে বন্ধ কওে বীর নিবাস মর্িানকাজ বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ মৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলী’র বিধবা স্ত্রী রেহানা পারভীন গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও এবং নড়াইলের পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কালিয়া উপজেলার বাঐসোনা গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলী’র বিধবা স্ত্রী রেহানা পারভীনের দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্প-২ এর আওতায় রেহেনা পারভীনের নামে একটি বীরনিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যায় বরাদ্দ দিয়ে মেসার্স রুমা এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ঠিকাদার রেহানার নিজস্ব জমিতে নির্মাণ সামগ্রী জমা করার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার ফুলবদিনা গ্রামের মৃত বাবু মোল্যার ছেলে হাসিবুর মোল্যা ও গোপলগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মৃত হোসেন মোল্যার ছেলে হাবিবুর রেহানার বাড়িতে গিয়ে বীরনিবাস নির্মাণ বাবদ ১লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে রেহানা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তখণ তাকে বীরনিবাস নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয় । এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ঠিকাদারের শ্রমিকরা বীরনিবাস নির্মাণ কাজ শুরু করলে দুপুরের দিকে হঠাৎ কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার এসআই আসাদুজ্জামান ওই দু’জনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারা ঠিকাদারের শ্রমিকদের আটকের হুমকি দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয় এসআই আসাদুজ্জামান মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করাসহ অশালীন আচরণ করেন। এখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। ওই পুলিশকর্তা গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নড়াগাতি থানায় হাজির হয়ে তার সাথে সমাধান না করা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চলে যান বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেসার্স রুমা এন্টারপ্রাইজের মালিক লিটু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ তাঁর নির্মাণ কাজের স্থলে গিয়ে জোর করে তাঁর শ্রমিকদের উঠিয়ে দেয় এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া শুক্রবার বিকালে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে থানায় গিয়ে এসআই আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগিদের সাথে আপোষ না করা পর্যন্ত বীর নিবাসের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ জারি করেন।
রেহানা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, বীরনিবাস নির্মাণের মালামাল আসতে শুরু করার পর থেকে হাবিবুর মোল্যা ও হাসিবুর মোল্যা গত কয়েক দিন ধরে তার কাছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলে সে পুলিশ দিয়ে বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জের ধরে এসআই আসাদুজ্জামান ওই দু’জনের সাথে যোগসাজশে তার বাড়ির নির্মাণ কাজ আটকে দিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে মিমাংসার নামে তাদেরকে হয়রানি করেছে।
হাবিবুর মোল্যার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে হাসিবুর মোল্যা চাঁদা দাবির কথা অস্বীকার করে বলেন,তারা ওয়ারিশ হিসাবে জমির একটি অংশ দাবি করেন। তাই ওই নির্মাণ কাজ ঠেকাতে তার ভায়রা হাবিবুর এসআই আসাদুজ্জামানকে ফোনে ডেকে নেন এবং ১ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাজটি বন্ধ করে সালিশের কথা বলেছে।
নড়াগাতি থানার এসআই আসাদুজ্জামন বীরনিবাসের কাজ বন্ধ করার সত্যতা স্বীকার করলেও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে অশালীন আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে তাই তিনি কাজ বন্ধ করে থানায় মিমাংসার জন্য যেতে বলেছিলেন। তবে কাজটি বন্ধ করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা ছিল না বলে জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মাকলুকার চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে একটি বীরনিবাসের কাজ বন্ধ করা ও একজন মৃত মুক্তিযোদ্ধার বিধাব স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের সাথে আশোভন আচারণ খুবই দুঃখ জনক। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
নড়াগাতি থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি আগে কিছু জানতেন না। পরবর্তীতে তিনি কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। বীরনিবাস নির্মান কাজে কোন বাঁধা বা কারো অবৈধ হস্তক্ষেপ থাকলে তার বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।