রিন্টু মুন্সী, নড়াইল : নড়াইলে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় ২১-২২অর্থ বছরে ৩০টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের এসব লুটপাট প্রকল্পের সাথে জড়িতদের বিরূদ্ধে অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লুটপাট প্রকল্পগুলির সাথে জড়িত চক্রটি ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত সর্বমোট ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এছাড়া মজার ব্যাপার হলো-একই প্রকল্পের নাম একাধিকবার অনুমোদিত প্রকল্প তালিকায় দেখা যায়। এলাকাবাসীর পক্ষে নুর ইসলাম মোল্যা এ বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে কলোড়া ইউনিয়নের সুধী সমাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৯ জুনে নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নে ৩০টি প্রকল্পের অনুকূলে ৩০লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প গুলো হলো, বাহিরগ্রাম কুন্ডুপাড়া রাস্তা সংস্কার, হাড়িয়াখালী মন্দিরে সোলার স্থাপন, আগদিয়া মহিলা মাদ্রাসা সংস্কার, আগদিয়া লিঠু শেখের বাড়ি থেকে এনামুলের বাড়ি পর্ষন্ত রাস্তা সংস্কার, আগদিয়া শিমুলিয়া বাজারের দু’পাশে বৃক্ষরোপন,আগদিয়া পাল পাড়া মন্দির সংস্কার, আগদিয়া শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র ক্রয়, বীড়গ্রাম পশ্চিম পাড়া ক্লাব সংস্কার, মুশুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র ক্রয়,রামনগরচর তরঙ্গ ক্লাবে আসবাবপত্র ক্রয়, কলোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট, বীড়গ্রাম উত্তর পাড়া রাস্তা সংস্কার, আগদিয়া মধ্য পাড়া মসজিদ সংস্কার, গোয়ালবাড়ি মালো পাড়ায় মাটি ভরাট, বীড়গ্রাম দক্ষিণ পাড়া রাস্তায় মাটি দিয়ে সংস্কার,নিরালী মন্দির সংস্কার, কলোড়া উত্তর পাড়া মন্দির সংস্কার, মুশুড়িয়া শিতলাতলা মসজিদ সংস্কার, হাড়িয়াখালী নদীর ওপর মন্দির সংস্কার, আগদিয়া পুরাতন হাঠখোলা মাটি দিয়ে ভরাট, শিমুলিয়া জামে মসজিদে মাইক ও বক্স ক্রয়, বীড়গ্রাম সিদ্ধিশ্বরের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর ইউ কালভার্ট নির্মাণ, মুশুড়িয়া শিমুলতলা মন্দিরে মাটি দিয়ে ভরাট, কলোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ম্যুরাল নির্মাণ, আগদিয়া গাবতলী কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে মাটি দিয়ে ভরাট, আগদিয়া শিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদীর ঘাট সংস্কার, আগদিয়ায় লিঠু শেখের বাড়ি পাশে দু’টি ইউ কালভার্ট নির্মাণ, আগদিয়া পাল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট। এসমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সীমা ছিল ৩০জুন’২২ পর্যন্ত। শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত নগদ সব অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ৩০টি প্রকল্পের কোন কাজ করা হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের তালিকার ১ নম্বরে হাড়িয়াখালি মন্দিরের সোলার প্যানেল স্থাপনে ১ লাখ টাকা, ২৭ নম্বরে হাড়িয়াখালী মন্দির সংস্কার ১ লাখ টাকা, ২৯ নম্বরে হাড়িয়াখালী নদীর ওপর মন্দির সংস্কারে ১ লাখ টাকা, মুশুড়িয়া শীতলতলা জামে মসজিদ সংস্কারের নামে ১ লাখ টাকা, আগদিয়া গাবতলী কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের নামে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব নাই। আবার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান থাকলেও ওই সব প্রতিষ্ঠানের কমিটির কেউ জানেন না,তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কোন প্রকল্প এসেছিল। এরকম ৩০টা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত সকল টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দকৃত সকল টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে । অথচ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা কিছুই জানেন না।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একজন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কলোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশিষ কুমার বিশ্বসে বলেন, তিনি কোন প্রকল্পের পিআইসি ছিলেন না। তবে সকল প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদের ব্যাপারটি কম্পিউটারের মিসটেক হয়েছে। আর এসব অভিযোগমূলত: আকোশমূলক করছেন কলোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্ত ও সাধারণ সম্পাদক উৎপল। তারা নিজেড়ের অপরাধ ঢাকতে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করছেন।