
হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইলে ভোটের মাঠে কোন উত্তাপ নেই। একেবারে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ভোটের আগেই ভোটের ফলাফল। তাই ভোট প্রদানে কারো কোন উৎসাহ নেই। ভোট নিয়ে কারো যেন কোন কৌতুহল নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র ৩ দিন। শেষ মুহুর্তে এসেও জমে উঠেনি প্রচার প্রচারনা।
নড়াইল-১ ও ২ আসনের নৌকার দু’জন প্রার্থী তাদের অনুগত নেতা,কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে পথসভা করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোটের মাঠের চিরাচরিত মিটিং-মিছিল নেই বললেই চলে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়। একাদশের মতো দ্বাদশেও নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মাশরাফি। আর নড়াইল-১ আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি। নৌকার প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দু’টি আসনেই ভোটের এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
দেশের অনেক আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তবে নড়াইলের চিত্র একেবারে ভিন্ন। নড়াইল-১ আসন থেকে বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তির স্ত্রী চন্দনা হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে ১৯ ডিসেম্বর তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এর বাইরে এমপি মুক্তি’র প্রতিদ্বন্দ্বি আছেন ওয়ার্কার্স পার্টীর নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টীর মো. মিল্টন মোল্যা, তৃণমূল বিএনপির শ্যামল চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি-জেপির শামিম আরা পারভীন (ইয়াসমিন)। তবে তাদের কেউই মুক্তি’র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্তিশালী নন বলেই মনে করেন মুক্তি’র অনুসারীসহ সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে নড়াইল-২ আসনে মাশরাফির প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু সংবাদ সম্মেলন করে মাশরাফিকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা হলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টীর মোঃ মনিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টীর খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, গণফ্রন্টের মো. লতিফুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টীর শেখ হাফিজুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মাহবুবুর রহমান। অসুস্থতার কারণে দেরিতে এসে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে মাশরাফি ভোটের প্রচার শুরু করেছেন ।
নড়াইলের দু’টি আসনে নৌকা বাদে অন্যদের তেমন কোন প্রচারনা নেই। নৌকার প্রার্থীরা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোট প্রর্থনা করছেন। তবে তারা ভোট প্রার্থনা অপেক্ষা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নেয়ার জন্য বেশি অনুরোধ করছেন। নানা ধরনের আবেগ অনুভুতি’র কথা বলে সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রদানে উৎসাহিত করছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরব।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে নৌকার প্রার্থী জিতবে এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে কোনো উত্তেজনা অনুভব করছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটার বলেন, ‘কীসের আর ভোট। নড়াইল-১ আসনে কবিরুল হক মুক্তি আর নড়াইল-২ আসনে মাশরাফিই জিতবে।
জেলা,উপজেলা শহর গ্রামের ছোট বড় বাজার কোথাও কোন চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় নেই। ভোট নিয়ে কোন আলোচনা সমালোচনা নেই।
জেলা বিএনপি’র একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী কারাগারে। ভোট নিয়ে মন্তব্য করে কোন বিপদে পড়তে চাই না। কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্তে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। আমাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোট দেবে না, এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সফল প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে যোগ্য মনে করেছেন তাদেও নড়াইলের দু’টি আসেন মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগার তারা শেখ হাসিনা মনোনীত এ দু’জনের পক্ষে কাজ করছেন। জামাত-বিএনপি চক্র এ নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদেরকে সে সুযোগ দেয়া হবে না। তারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা সৃষ্টি করলে শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে। মানুষ যাতে সাচ্ছন্দে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত