হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ভালো নেই। ২০২২ সালের ১৮ জুন তিনি নিজ কর্মস্থল নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে প্রশাসনের উপস্থিতিতে চরমভাবে লাঞ্ছিত হন। লাঞ্ছিতের ঘটনায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তোলপাড় হয়। সারা দেশের সভ্য সমাজ, সচেতন মহল ও শিক্ষক সমাজ তীব্র নিন্দা জানান। বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। দোষিদের শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়। ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও গুজব ছড়িয়ে তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস (সহকারি অধ্যাপক) কে লাঞ্ছিত করে চাকুরিচ্যুত করার অপচেষ্টার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিরূদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথক পৃথক তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত করেছে। সকল দপ্তরের তদন্তের ফলাফল প্রায় একই। সকলের সন্দেহের তীর একই ব্যক্তির দিকে। উচ্চ মহলের তদবীরের কারনে তদন্ত পরবর্তী কার্যক্রম থমকে গেছে। মুল অপরাধী থেকে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
কেমন আছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস : ভালো নেই স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাকে লাঞ্ছিত করার সাথে জড়িতদের বিরূদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা আরোও বেপরোয়া। সারাক্ষণ আতংকে থাকেন স্বপন কুমার বিশ্বাস কর্মস্থলে তিনি নিজেকে এক মুহুর্ত নিরাপদ মনে করেন না। ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সহকর্মীরা আবারও অনাকাংখিত কোন ঘটনা ঘটাতে পারেন, সারক্ষণ এমন আতংকে থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কারো সাথে কোন কথা বলেন না। বিশেষ করে যাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে তিনি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু তারা নানা অজুহাতে কথা বলেন বা বলার চেষ্টা করেন। এতে তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। সবকিছু বুঝেও তারা নানাভাবে তার অবস্থান ও পারিবারিক খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে তিনি আরোও শংকিত হন। একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি আরোও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এ কলেজে চাকরি করছেন। দীর্ঘ চাকুরী জীবনে তিনি কারো সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেননি। অহেতুক তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গলায় জুতার মালা দিয়ে মারপিট করা হয়। চাকুরী হতে বরখাস্ত করার অপচেষ্টা করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন,মিডিয়া কর্মী ও সচেতন মহলের কারনে দুষ্টু চক্র সফল হয়নি। কিন্তু তারা হাল ছাড়েনি। তাদের অপচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তারা তাকে সব সময় ফলো করেন। স্বাধীনভাবে চলাচল করতে দেন না। তাদের দ্বারা আবারও আক্রমনের শিকার হতে পারেন, এমন শংকায় তিনি নিজ গ্রাম নড়াইল সদর উপজেলার বড়কুলা ছেড়ে নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সন্তানদের শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন।
গ্রামে তিনি ভালোই ছিলেন। খরচ অনেক কম ছিল। শহরে এসে বাসা ভাড়া,গ্যাস ও পানি কেনা সহ নানাবিধ খরচ বেড়েছে। গ্রামের বাড়িতে থাকা বাবা-মায়ের নিয়মিত বাজার খরচ সহ সকল খরচ দিতে হয়। এদিকে শহরের বড় অংকের খরচের সাথে তিন মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগাতে একার আয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তথাপিও নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য গ্রামে থাকতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত: ২০২২ সালের ১৮ জুন সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিষবাস্প ছড়িয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পরিকল্পিতভাবে একটি চক্র শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। একই সাথে তিনি সম্মান ও মোটরসাইকেল হারান। এমনকি তাকে চাকুরীচ্যুত করার ঘোষনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বিষয়টি সর্বমহলে জানাজানি হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে কলেজে নিয়ে যান। সম্মান ও চাকরি ফিরে পেলেও আর্থিক সংকট কাটেনি।