জন্মভূমি ডেস্ক : দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব জেলায় ডিসি নিয়োগের পর গত ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসনে নজিরবিহীন ঘটনার ফলে নিয়মিত অফিস করছেন না মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান এবং জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। এদিকে ডিসি নিয়োগে বঞ্চিত কর্মকর্তারা ঘুরছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
আওয়ামী লীগের ফিটলিস্ট (তালিকা) থেকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে যথাযথভাবে কাজ করতে পারছেন না।
কয়েকজন ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয় লোকজন। ফলে বেশির ভাগ নতুন ডিসিকে ফের প্রত্যাহার করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এতে নতুন ডিসিরা কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না। প্রজ্ঞাপন জারির পরই ৯ জেলার ডিসির নিয়োগ বাতিল করা হয়।
এরপর সাত দিন অতিবাহিত হলেও আট জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ হয়নি।
নতুন ডিসিদের প্রত্যাহারের দাবি
গত রবিবার লক্ষ্মীপুরের নতুন ডিসি রাজিব কুমার সরকারকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে এই আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নতুন ডিসি স্বৈরাচারের দোসর। তাঁর পুরো গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ করে। তাঁকে দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
একইভাবে খুলনার নতুন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ। গত শনিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
১৯৯৮ সালে থেকে টানা চার বছর ছাত্রলীগের সভাপতি বাহাদুর বেপারীর একান্ত সহকারী ছিলেন তিনি। ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌলভীবাজারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শেখ হাসিনা সরকারের হত্যাযজ্ঞের সময় মাঠ প্রশাসন সাজিয়ে গণ-অভ্যুত্থান দমাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন সাইফুল ইসলাম। তাই অবিলম্বে খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদ থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে গণহত্যায় সহযোগিতার অপরাধে শাস্তি দিতে হবে।
জানা যায়, নতুন ডিসি পদায়নে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বৈষম্যবিরোধী (বঞ্চিত) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা যথাসময়ে জ্যেষ্ঠ সচিবের দপ্তরে গেলেও তিনি জরুরি মিটিংয়ের কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যান। কর্মকর্তারা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও সচিব আর দপ্তরে ফেরেননি।
জানা গেছে, বঞ্চিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়াতে মন্ত্রি পরিষদসচিবও ঠিকমতো অফিস করছেন না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ, কে এম আলী আযমও গতকাল অফিস করেননি। রবিবারও তাঁরা কক্ষে বসেননি।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, নতুন ডিসি নিয়োগের পর জনপ্রশাসন সচিব তাঁদের জানিয়েছিলেন, সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগের ফিটলিস্টের অনেক কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা জানতে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ বুধবারও সচিবের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি অফিসের বাইরে আছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যকে নিয়েও অভিযোগ
নতুন ডিসি নিয়োগের জেরে হট্টগোলের পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ জন্য গত রবিবার বিসিএস ২৪তম ব্যাচের চারজন এবং গতকাল মঙ্গলবার ২৫তম ব্যাচের চারজন বঞ্চিত কর্মকর্তার শুনানি নেওয়া হয়। আজ বুধবার ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের শুনানি হবে। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হতে পারে।
শুনানিতে অংশ নেওয়া বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা একপেশে প্রশ্ন করছেন। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ২৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে কথা বলছেন তিনি। তিনি বিশেষ বিবেচনায় ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। এতে তাঁর পিএসসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাতজন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান।