জন্মভূমি ডেস্ক : উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান” শ্লোগান দিয়ে এবার ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মোট ১১ টি এরিয়া ধরে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে আছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সু-ব্যবস্থাপনা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
এই আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সরকারের দায়িত্বে আছে গত এক দশকেরও বেশি সময়। ইতিমধ্যেই তারা আবারও আগামী ৫ বছরের জন্য জনগণের রায় নিয়ে শপথ গ্রহণ করেছে। আগের ইশতেহারগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখলে যে বিষয়টা আমার কাছে খুব পরিষ্কার মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে এবারের ইশতেহারে সরাসরি কিছু কথা বলা হয়েছে। পূর্বের ইশতেহারের সাথে নীতিগত আলাপে পার্থক্য নাই বা থাকার কথাও ছিলো না। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দায়িত্ব নিবে তাদের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনায় পার্থক্য থাকা কাম্য নয়, কারণ প্রতিটা কাজেরই ধারাবাহিকতা থাকা উচিত। অন্যথায় উন্নয়ন পরিকল্পনা বা কাজের ধারাবাহিকতা থাকেনা। সেদিক থেকে ২০১৮ এর ইশতেহারকে মিলালে সেই ধারাবাহিকতারই পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এবার আরও সরাসরি বলা হয়েছে। যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। বিশেষ করে সদ্য সাবেক সরকারের আমলে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি সংকট তৈরি করেছিলো সেটি ছিলো দ্রব্যমূল্য। এবারের ইশতেহারে এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই সম্ভবত স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। ইশতেহারে আরও আছে অর্থনৈতিক সু-ব্যবস্থাপনা।
একটি বিষয় পরিষ্কার যে আর্থিক সু-ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে সরকারের উপর আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিলো চরমভাবে। প্রশ্ন উঠেছিলো দেশী ও বিদেশী সকল মহলের কাছেই। বাকি বিষয়গুলোর মাঝে আমার কাছে মনে হয় এই দুটি জায়গায় যদি স্পষ্ট পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয় তাহলে মানুষের মাঝে সস্তি ফিরে আসবে। নির্বাচনের আগে মানুষের মাঝে যতটুকু অনাস্থার জায়গা ছিলো তার পুরোটাই এই দুটি জায়গাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। আশা করছি নতুন সরকার তাদের শপথকে দৃঢ়তার সাথে দৃশ্যমান করবে।
সরকার আসে সরকার যায়। জনগণ তার জায়গাতেই থাকে। জনগণের চাওয়াপাওয়াগুলোরও তাই কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হয় না। আর যুগের পর যুগ কেবল এই ইস্যুগুলোর মিমাংসার মাধ্যমে নাগরিক জীবনে সস্তির আশায় সরকার পরিবর্তন করে জনগণ। এ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাক্ষী এখন প্রজন্ম। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে বা নতুন বিমানবন্দর এ সবকিছুই আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে সকল ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা। দুর্নীতির সাথে যুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় এনে একটি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। দেশের মানুষের চিন্তার জগতের উন্নয়ন যার জন্য দরকার একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কাঠামো গড়ে তোলা। মৌলবাদকে মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। নারীর অবাধ চলাফেরার নিশ্চয়তা। নারীর এগিয়ে যাওয়ায় যেন কোনো সামাজিক বাধা আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী সে কথা একজন অশিক্ষিত মানুষও স্বীকার করবে কারণ সবার জীবনেই পরিবর্তন দৃশ্যমান। জীবনের চাহিদাগুলোর পরিবর্তন এসেছে কিন্তু সেই জীবনকে একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান পথে চালানোর ব্যবস্থাটি অনুপস্থিত দারুণভাবে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ উন্নত চিকিৎসার আশায় আমাদেরই প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যাচ্ছে। একদিকে বাংলাদেশ হারাচ্ছে ডলার আবার আস্থার সংকট সরকারের অনেক উন্নয়নকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। নাগরিকদের প্রত্যাশা- এবার সরকার স্থিরভাবে একটি সুস্থ ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিবে।
স্মার্ট বাংলাদেশের পথেই হাঁটছি আমরা কিন্তু সেই স্মার্ট প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যারা মানুষের পকেট মেরে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব ছিলো বিগত সরকারে। প্রযুক্তির শিক্ষার পাশাপাশি একটি সুশাসনের কথাও ভাবা প্রয়োজন। প্রযুক্তির উন্নয়ন যেন সাধারণ মানুষের জীবন নাশের কারণ না হয়ে যায়। কেবল টিকচিহ্নের উন্নয়ন চায়না জনগণ।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বেশিরভাগই ছিলো অকার্যকর। সবাই ছিলো একজন শেখ হাসিনার মুখাপেক্ষি। এই অবস্থার উত্তরণও জরুরি। তিনি একমাথায় যদি সবকিছুই করতে পারেন তাহলে আর এতো বিশাল মন্ত্রিসভার কাজ কী? এতো প্রশাসনিক কাঠামোর দায়বদ্ধতার জায়গাটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে আগ্রহ আছে অনেক কিন্তু সেই তুলনায় জনসংশ্লিষ্টতা ছিলো অনেক কম। সারাদেশের সাংস্কৃতিক অবকাঠামোগুলোকে অবহেলায় হারাতে বসেছে প্রায়। গ্রামগঞ্জ বা জেলা ইউনিয়নের কোথাও এখন আর সাংস্কৃতিক আয়োজন হয় না। আর এই জায়গাটি দখলে নিয়ে নিচ্ছে মৌলবাদ বা ধর্মান্ধতা। এই ধর্মান্ধতা আজকে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারও হাতখোলাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। এইতো সামনেই পহেলা বৈশাখ। আবারও শুরু হবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর মিথ্যা আস্ফালন। এই টার্মে সরকার আরও সচেতন হয়ে কাজ করবে। "প্রায়োরিটি" তালিকা করে করে সংশ্লিষ্ট সকলে নিজেদের কাজটি করবেন সুচারুভাবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত