
জন্মভূমি রিপোর্ট : বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা ও রূপসা-ভৈরব বিধৌত খুলনা জেলার ১৪২ তম জন্মদিন মঙ্গলবার ২৫ এপ্রিল। দিবসটি পালনের জন্য বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
মঙ্গলবার খুলনা জেলার ১৪২ বছর পূর্তিতে খুলনা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে ছিল- উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য র্যালি, মেজবানী, স্মরণিকা প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে বর্ণাঢ্য র্যালির উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। মেয়রের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
এসময় আগত অতিথিরা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে খুলনার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একসময়ের অবহেলিত ও বঞ্চিত খুলনা আজ উন্নয়নের ধারায় ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকার খুলনার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। তারা খুলনার চলমান ড্রেনেজ ও রাস্তার নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে খুলনাবাসীর ভোগান্তি লাঘব করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানান।
সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, নগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে স্মরণিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম মিরাজুল ইসলাম, সদস্য রুনু ইকবাল বিথার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুকুল কুমার মৈত্র, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা নামকরণের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত মতগুলোর ধনপতি সওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুলনার নামে নির্মিত ‘খুলনেশ্বরী মন্দির’ থেকে খুলনা নামের উৎপত্তির কথা বেশি প্রচলিত।
এছাড়া ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করা রেকর্ডে লিখিত ঈঁষহবধ শব্দ থেকে খুলনা। অনেক বিজ্ঞজনের মতে ‘কিসমত খুলনা’ মৌজা থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে মানচিত্রে লিখিত ঔবংংড়ৎব-ঈঁষহধ শব্দ থেকে খুলনা এসেছে বলেও অনেকের ধারণা।
১৮৪২ সালে ভৈরব-রূপসা বিধৌত পুণ্যভূমি নয়াবাদ থানা ও কিসমত খুলনাকে কেন্দ্র করে নতুন জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় খুলনায়। খুলনা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশদের প্রশাসনিক এলাকা বৃদ্ধি এবং ভৌগলিক অবস্থার কারণে জেলাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
৪০ বছরের ব্যবধানে ৪ হাজার ৬৩০ বর্গমাইল এলাকা, ৪৩ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাকে নিয়ে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুলনার ১৪২তম জন্মদিন আজ।
এর আগে খুলনা ছিল যশোর জেলার মহকুমা। ব্রিটিশ শাসক ডাব্লিউ এম ক্লে খুলনা জেলার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।