জন্মভূমি ডেস্ক : শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ও বিষয় অনুযায়ী ৬৮ জন শিক্ষক, ইনস্ট্রাক্টর, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু আছেন মাত্র ২৩ জন। শিক্ষক ও ইনস্ট্রাক্টরের অধিকাংশ পদই শূন্য থাকায় পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে এখানে আগে দুই পালায় পাঠদান করা হলেও এখন এক পালায় পাঠদান করতে হচ্ছে। একটি ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ল্যাবসংকটে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসও নিয়মিত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই করুণ চিত্র বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য এখানে কোনো ক্যানটিন না থাকা একটি বড় সমস্যা। এখানে কোনো হোস্টেল না থাকায় দূরের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। খেলার মাঠ থাকলেও বছরের চার মাস তাতে পানি জমে থাকে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের জন্য দ্রুত এসব সমাধানের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও ল্যাবসংকট মেটাতে পাঁচতলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ চলছে। এ ছাড়া অন্যান্য সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে বাগেরহাট শহরের নূর মসজিদে মোড়সংলগ্ন দশানী এলাকায় ৩ দশমিক ৯০ একর জমির ওপর ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই) নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৩ সালে বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নামে রূপান্তরিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন—এই চারটি ট্রেডে এসএসসি ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) বিষয়ে পড়ানো শুরু হয়। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চালু হয় চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল কোর্স। তবে ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এই কোর্স। কলেজের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে একজন অধ্যক্ষ, ট্রেড কোর্সগুলোর জন্য ৮ জন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ৭ জন ইনস্ট্রাক্টর, ১৪ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৮ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৪ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাধারণ বিষয়ের জন্য ১৬ জন শিক্ষকসহ ৬৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি পদই শূন্য। শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ, ৬ জন ইনস্ট্রাক্টর, ৫ জন ইনস্ট্রাক্টর, ১১ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৬ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৩ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ৯ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী স্টোরকিপার ও ২ জন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক ও অন্যান্য পদ শূন্য থাকার পরেও কলেজ কর্তৃপক্ষ চলতি বছর থেকে নতুন করে ষষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন চালু করা তিনটি শ্রেণির জন্য কোনো শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি সরকার। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সাত শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য কোনো ক্যানটিন নেই কলেজ কমপ্লেক্সে। একসময় শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল থাকলেও বর্তমানে কোনো আবাসনব্যবস্থা নেই। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন দূরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। ফকিরহাট থেকে আসা হুসাইন আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বাড়ি থেকে এসে ক্লাস করি। হোস্টেল থাকলে খুব ভালো হতো।’ ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতে মাঠ জলাবদ্ধ হয়ে যায়। আমরা খেলতে পারি না। পানির মেশিন থাকলেও নিয়মিত পানি পাই না। আমাদের কলেজে কোনো ক্যানটিনও নেই।’ কম্পিউটার ও আইটি ট্রেডের শিক্ষার্থী নাজনীন বাবু তুবা বলেন, ‘এখানে মোটামুটি ভালোই কাজ শিখছি। তবে আরও বেশি ব্যবহারিক ক্লাস হলে ভালো হতো।’ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার মূল হলো ব্যবহারিক ক্লাস। শিক্ষক না থাকায় আমাদের সব ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এ ছাড়া ব্যবহারিক ক্লাস করার সময় কোনো উপাদান যদি ভেঙে যায় বা খোয়া যায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাই মিলে টাকা দিয়ে কিনে দিতে হয়।’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবসংকট দূর হবে। এ ছাড়া শিক্ষকসংকট ও মাঠের সমস্যা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ রয়েছে।’