
জন্মভূমি ডেস্ক : নারকেলের রাজধানী খ্যাত বাগেরহাটে নারকেলের আকাল দেখা দিয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, হোয়াইট ফ্লাইয়ের আক্রমণ ও নানা রোগ ব্যাধির কারণে নারকেল উৎপাদন বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে বাগেরহাটের কৃষি অর্থনীতিতে। বাগেরহাটের কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় উৎপাদিত ৪১ ধরনের ফলের মধ্যে অর্থকরী ফসল নারকেল সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে উৎপাদন হয়। সব উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সীমানায়, ঘেরের পাড়ে, রাস্তার পাশে নারকেল গাছ রয়েছে। সরকারি হিসেবে ৩২০০ হেক্টর জমিতে নারকেল চাষের কথা বলা হলেও জমির প্রকৃত পরিমাণ আরো বেশি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তবে এসব নারকেল গাছ পরিকল্পিত ভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়নি বলে জানান চাষিরা। জেলার একাধিক চাষি ও নারকেল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিডরের পর থেকে নারকেল উৎপাদন করতে শুরু করে। সরকারি হিসাব মতে জেলায় বার্ষিক ৩৫ হাজার মে.ট. নারকেল উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে (২০২৩ সালে) নারকেল উৎপাদনের হার সবচেয়ে কম বলে জানান চাষিরা। পূর্বের চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নারকেল উৎপাদন কমেছে জানান একাধিক নারকেল ব্যবসায়ী। দামও বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। ফকিরহাটের পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত শেখ জানান, আমার ঘেরের পাড়ে (মাছের খামার) প্রায় ১০০ টির মতো নারকেল গাছ আছে। বছরে এই গাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার নারকেল বিক্রি করতাম। কিন্তু চলতি বছর থেকে আমার নারকেল গাছের ফলন কমতে শুরু করেছে। বছরের ৬ মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার নারকেল বিক্রি করতে পারিনি। অনেক গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকায় ভরে গেছে। আবার গোড়ায় সাদা রোগে (শৃতিমূল ছত্রাক) পচে যাচ্ছে। বাগেরহাটে নারকেলের পাইকারী ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী, শেখ হাফিজুল ইসলাম, কানাই লাল চক্রবর্তী জানান, আগে সপ্তাহের রবি ও বুধবার হাটের দিনে একেক জনে ৭ থেকে ৮ হাজার নারকেল কিনতাম। এখন ১৫ থেকে ১৬ শ নারকেল পাই। দাম ও চড়া। ছোট বড় গড়ে নারকেলের জোড়া ১০০ টাকায় কিনতে হয়। ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন জলবায়ু পরিবর্তন, নারকেল গাছে সাদা মাছির আক্রমণ ও ছত্রাক জনিত কারণে উৎপাদন কমেছে। এসব অঞ্চলের নারকেল গাছ অনেক উচু ও অপরিকল্পিত ভাবে রোপন করায় সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবহার করা কষ্ট সাধ্য। কৃষকরাও আগ্রহী কম। তবে অর্থকারী ফসল নারকেলের বিষয়ে একটি প্রকল্প হতে নেওয়া হচ্ছে।