সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানা পুলিশের গাফিলতিতে ভারতে পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হয়ে ফিরে আসা গৃহবধূ রোকিয়া সুলতানা মামলার আসামী স্বামী ও শ^শুর এক মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি। বর্তমানে আসামীদের হুমকিতে চরমনিরাপ্তাহীনতায় ভুগছে ওই পরিবারটি।
অভিযোগ উঠেছে, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শ^শুর ও স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী রোকিয়া সুলতানাকে বিক্রির উদ্দেশ্যে অচেতনের করে কৌশলে ভারতে পাচার করে। ভারতের বশিরহাটের একটি ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় বিএসএফ ওই গৃহবধূকে হাসনাবাদ এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। পরে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পাচারকৃত ওই গৃহবধূকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর পিতা বাদী হয়ে জামাতাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলার বিবরণে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজারগ্রাম রহিমপুর গ্রামের ইয়াকুব আলী মোড়লের ছেলে নুর ইসলাম ওরফে প্লাবন (২৪) এর সাথে ২০২২ সালের ১৮ আগস্ট পাশর্^বর্তী শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া গ্রামের ফার্নিচার মিস্ত্রী আব্দুর রহমানের মেয়ে রোকিয়া সুলতানার (১৯) পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় জমি কেনার জন্য একলক্ষ টাকা প্রদান করা সত্বেও কিছুদিন পর আরও টাকার দাবিতে রোকিয়া সুলতানাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে তার স্বামী, শশুর ও পরিবারের সদস্যরা। চাহিদা অনুযায়ী যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর শারীরিক নির্যাতনের পর রোকেয়াকে তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের করে দিলে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় রোকেয়ার পরিবার। পরবর্তীতে গত ১৬ আগস্ট দেকা করার জন্য রোকেয়া মোবাইল করে স্বামী নুর ইসলাম। দেখা করতে যাওয়ার পর থেকে নিখোজ হয় রোকেয়া সুলতানা। তাকে কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে ভারতের বশিরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে রোকিয়া সুলতানাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে না পাওয়ায় শ্যামনগর থানায় ২০ আগস্ট নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরী করেন তার মা (ডায়েরী নং ১০৩৯)। খোঁজখবরের একপর্যায়ে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে রোকিয়ার পরিবার জানতে পারে যে, তাদের মেয়েকে বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতে পাচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে বৈধভাবে ভারতে অবস্থানকারী কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী গ্রামের দীন ইসলাম দীনুর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪০) ও একই গ্রামের নুরুল গাজীর ছেলে ফারুক (২৮) এর মাধ্যমে ভারতের বশিরহাটের একটি ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় বিএসএফ সদস্যদের সহযোগিতায় আটক অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এঘটনায় রোকিয়া সুলতানার পিতা বাদী হয়ে জামাতা নুর ইসলাম প্লাবন, তার পিতা ইয়াকুব আলী মোড়লসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ সেপ্টেম্বর কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি পদর্শন করছে বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্ত কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মোরশেদ আলম জানান, থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিরা পালিয়ে রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত