
দেশ থেকে অভিনব কৌশলে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি বহুল আলোচিত। জাতীয় নির্বাচনের বছরে বেপরোয়া অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে, এ তথ্যও বেশ পুরোনো।
এ সময়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় কিছু রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বস্তুত যাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ আছে, তারা নির্বাচনি বছর এলেই তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং অনেকে বিদেশে তা পাচার করেন। যারা অবৈধ অর্থের মালিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকেন তারা মনে করেন, সরকার পরিবর্তন হলেই তাদের নানা ধরনের অসুবিধা হতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আগের বছরের তুলনায় ২০১৮, ২০১৪ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছিল। এ বছরগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচিত ছিল। চলতি বছরও নির্বাচনি বছর হওয়ায় অতীতের মতো বেশি অর্থ পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।
বস্তুত দেশ থেকে সিংহভাগ অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে বাডুজ্যের আড়ালে। অর্থ পাচারকারীরা সাধারণত যেসব দেশ বেছে নেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। অর্থ পাচারের একটি বড় রুট দুবাই। জানা যায়, বিভিন্ন ব্যক্তি বড় অঙ্কের ঘুস লেনদেন করেন দুবাইয়ে বসে এবং তা ডলারে। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে ওভার ইনভয়েসিং (আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো) এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের (রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো) মাধ্যমে অর্থ পাচারের যে ঘটনা ঘটে তা রোধ হতে পারে। অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ হলো দুর্নীতি।
দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচার কমবে। দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি হলে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমবে। প্রতিবছর যে অর্থ পাচার হয় তা যদি দেশে বিনিয়োগ হতো, তাহলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারত।
সাধারণত রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হলে অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও অনিশ্চয়তা রয়েছে; পরিস্থিতি যে কোনো সময় অস্থির হতে পারে-এ আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই দেশে যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়লে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা পাচারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বস্তুত দেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমলে তা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপরও প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ বিনিয়োগের বিষয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও কমতে পারে। এ বাস্তবতায় দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার চর্চার ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। কাজেই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অর্থ পাচার রোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনাটাও জরুরি।