নির্বাচন প্রশ্নে সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছেন। তফশিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। ৩০০ আসনেই ভোটগ্রহণ হবে কাগজের ব্যালটে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হওয়ায় তা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনাকে কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে। সিইসিও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংসতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অবশ্য তফশিল ঘোষণার পর যে সমঝোতা হতে পারে না তা নয়। এখনো রয়েছে সেই সুযোগ। তবে এজন্য প্রয়োজন আলোচনা বা সংলাপের। সিইসি নিজেও বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়। আমরাও মনে করি, রাজনীতিতে যত অচলাবস্থাই বিরাজ করুক, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। সেক্ষেত্রে সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প নেই। তবে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে।
পরিতাপের বিষয় হলো, নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তা ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেশকে শুধু রাজনৈতিকভাবেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন করবে না, অর্থনৈতিক সংকটকেও করে তুলবে আরও গভীর। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা এদেশের অর্থনীতিতেও বড় ধাক্কা দিয়েছে। বর্তমানে দেশে সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও ভালো নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধী দল দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সহিংসতা ও গাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের ধরপাকড়ে সংলাপ-সমঝোতার ন্যূনতম সম্ভাবনাও যেন তিরোহিত হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে পড়বে এর নেতিবাচক প্রভাব। সামগ্রিকভাবে এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিলে রুদ্ধ হয় কর্মসংস্থানের পথ। তাই সব পক্ষেরই উচিত অনমনীয় অবস্থান পরিহার করে জনস্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেওয়া। বস্তুত জনগণের জন্যই যে রাজনীতি, এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের। জনগণের প্রত্যাশা, এখনো সমঝোতার যে সুযোগ আছে, তা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আলোচনার একটি উদ্যোগ নেওয়া হোক; এবং তা আসুক সরকারের পক্ষ থেকে। বিরোধী দলগুলো শর্তহীনভাবে তাতে সাড়া দিক। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করুক।