আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের সব শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় অনেক প্রশ্ন ওঠে। আগামী নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সরকারি দলও সমান সতর্ক।
নির্বাচন কিভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায়, তা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারে কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহের ঘাটতি নেই। নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে সর্বত্র।
এরই মধ্যে কিছু সংঘাত-সংঘর্ষের খবর আসছে। কোথাও কোথাও নির্বচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। কোথাও প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে কক্সবাজারে কল্যাণ পার্টির ক্যাম্পে আগুন, র্যাবের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়।
একই দিন গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প সংলগ্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়লে কাচের আঘাতে দুজন আহত হয়। কুমিল্লার দেবীদ্বারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আট জেলায় সহিংসতা, কুপিয়ে জখম, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনার খবর আসে গণমাধ্যমে। গত ২ জানুয়ারি তিনজনকে কুপিয়ে জখম, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার খবর আসে। বরিশালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রীকে হত্যার হুমকি এবং তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নির্বাচনকে ভোট উৎসব বলেই ধরা হয়। নির্বাচন উৎসবে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা নানা আয়োজনে ভোট প্রার্থনায় নামে। পথসভা, কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় চলে নির্বাচনী প্রচার। নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, সহনশীলতা দেখাতে হবে। নির্বাচনে যার যার ভোট সে সে শান্তিমতো দেবে। এতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে এবং সেই পরিবেশটা রক্ষা করতে হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন গতিশীল হতে পারে না; দীর্ঘস্থায়ীও হয় না। জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনেরও পূর্বশর্ত হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। সবাই জয়ী হওয়ার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই নির্ধারিত হয় জয়-পরাজয়। কাজেই জয়ের জন্য নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা অবশ্যই সব দলের মধ্যে থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষ ও কঠোর হতে হবে। সবার সহযোগিতা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না।