বিশেষ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতি ত্রিমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছে। সংবিধান মেনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান অটুট রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপিসহ ৩৬টি সমমনা রাজনৈতিক দল। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলছে। এই ত্রিমুখি অবস্থানে দেশের রাজনীতি অনেকটাই টালমাটাল। আর নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে দেশের রাজনীতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংবিধানের আলোকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েই থেমে নেই বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তারা। সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে তারা ইতোমধ্যে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখি অবস্থানের মধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে কমিশন। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, বলা যায় ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমরা এখনো ভোটগ্রহণের কোনো তারিখ ঠিক করিনি।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- ইসির এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, কিসের নির্বাচন? কার নির্বাচন? যে ভোটাধিকারের জন্য মানুষ সংগ্রাম করছে তা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেই নির্বাচন হয়ে যাবে? এত সহজ নয়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ তার অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছে। ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে লক্ষ মানুষের হৃদয়ে আন্দোলনের দোলা দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন নির্দিষ্ট কোনো দলের জন্য অনুষ্ঠিত হয় না বা কোনো দলের জন্য থেমে থাকে না। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি তাদের ভুয়া ভোটার ব্যাংক নষ্ট হওয়ায় এবং পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতাদখলের সুযোগ না থাকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণে ভয় পায়। বিএনপি গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জাতীয় অগ্রগতিকে ধারণ করে না, উল্টো গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে একের পর এক বিদেশি কূটনীতিকরা দেশে আসছেন। সরকার দল, বিরোধী দল ও সুশিল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করছেন।জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বরাবরের মতই বিপরীতমুখি অবস্থান করছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। ধারণা করা হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করতে ধারাবাহিক আন্দলন কর্মসূচিতে যাবে বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কোঠার আন্দোলনের দিকে যাবে তারা। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমঝোতা না হলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। আর সরকারি দলও আগের মতাই তাদের অবস্থান রাজপথে ধরে রাখতে সবোর্চ্চ চেষ্টা চালাবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অবস্থান ধরে রাখলে দেশ সহিংসতার দিকে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।