
সংসদীয় আসনে সংঘাত, সংর্ঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, ভাংচুর
দুপক্ষকেই সতর্ক করে দিয়ে দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করার কথা বলেছি। কেউ যদি দলের নির্দেশনা না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বহিস্কারসহ কড়া পদক্ষেপ- শেখ হারুন
জন্মভূমি রিপোর্ট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যতঃ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রুপিংয়ের কারণে বিভিন্নস্থানে নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত, সংর্ঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা বিজয়ী সংসদ সদস্যের কর্মী সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খুলনা ৪ ও ৫ আসনে নির্বাচন পরবর্তী ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগ এনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা যদি বিরোধ মেটাতে এখনই উদ্যোগ না নেন, তাহলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যাবে এবং দল দুর্বল হয়ে পড়বে।
জানাগেছে , ৯টি উপজেলা নিয়ে খুলনা-১, ৪, ৫ ও ৬ সংসদীয় আসন গঠিত। এসব উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শক্তিশালী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭টি উপজেলায় আওয়ামীলীগের গ্রুপিং চরম আকার ধারণ করেছে। তিনটি আসনে দুই-তিন গ্রুপ বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।
বটিয়াঘাটা ও দাকাপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসন। এ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্য কোন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় কোন গ্রুপিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।
খুলনা-৪ আসনটি রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে সাঊেশ তারকা ফুটবলার ও শিল্পপতি সালাম মূর্শেদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করার পর এলাকায় নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ ঘরানার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। তার ভাই প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ও হুইপ ছিলেন। প্রভাশালী এ নেতার কারণে এবারের নির্বাচনে এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার জনপ্রিয়তা ছিল অনেক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ভোট ব্যাংক ধরে রাখকে পারেন নি। সালাম মূর্শেদী এবং দারা একই দলের হওয়ায় এবারের নির্বাচনে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নির্বাচন পরবর্তী এই আসনে ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী দারা বর্তমান সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে সংঘাত, সংর্ঘর্ষ, হামলা, লুটপাট, ভাংচুরের ঘটনার ২২ টি অভিযোগ করেছেন। যদি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সালাম মূর্শেদী বলেছেন উনি (দারা) ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে এ তিন উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিষদে শপথ নিয়েছেন। এ আসনের পরাজিত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন নির্বাচন পরবর্তী এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, এখনো নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কর্মী সমর্থকদের কাছে তার কর্মী সমর্থকরা প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত হচ্ছেন। এ আসনেও আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি।
পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ খেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান, পরাজিত নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম এবং সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের তিন গ্রুপে বিভক্ত।
এদিকে আওয়ামী লীগের দু’ পক্ষের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত সংঘর্ষের ব্যাপারে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, খুলনা-৪ ও ৫ আসনের নির্বাচন সংক্রান্ত সংঘর্ষের ঘটনা ইতিমধ্যে আমাদের কানে এসেছে। আমরা দুপক্ষকেই সতর্ক করে দিয়ে দলের স্বার্থে এক হয়ে কাজ করার কথা বলেছি। কেউ যদি দলের নির্দেশনা না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বহিস্কারসহ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।