জন্মভূমি ডেস্ক : সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বছরব্যাপী লাগাতার আন্দোলন করেছে বিএনপি। এ আন্দোলনে সফলতা অর্জন করতে না পারলেও নির্বাচন বর্জন করে চরম বেকায়দায় পড়ে দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে সরকারকে চাপে রেখে দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে বছরব্যাপী দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রাখে বিএনপি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি, ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘন ঘন মিটিং চালান দলের সিনিয়র নেতারা। দেশের বাইরে অবস্থান করা বিএনপি নেতারাও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের পক্ষে লবিং করেন। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুসারে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেন কূটনীতিকদের। এ পরিস্থিতিতে ১৫ অক্টোবর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচনে বিএনপি না গেলেও ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৭টি দল অংশ নেওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় কূটনীতিকরা বিএনপির সঙ্গে মিটিং-সিটিং করা বন্ধ করে।
বছরের শুরুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল নেয় বিএনপি। সমমনা বেশ ক’টি দলকেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক করা হয়। রাজধানীতে ১২ জুলাই বড় সমাবেশ করে আগের ১০ দফাকে একীভূত করে সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এক দফা কর্মসূচি হলেও বাস্তবে ছিল একগুচ্ছ কর্মসূচি।
এক দফা দাবি ঘোষণার একদিন পর ১৩ জুলাই বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করে। ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি ঘটিয়ে বড় ধরনের মহাসমাবেশ করে। পরদিন ২৯ জুলাই রাজধানীর চারদিকের প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের তেমন উপস্থিতি না থাকায় এ কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয় বিএনপি।
এক পর্যায়ে সারাদেশের সকল বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি, যা ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর শেষ হয়। এবং একদফা দাবিতে ১৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ সফল করে আন্দোলনের শেষ ধাপে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় বিএনপি। কিন্তু কর্মসূচি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ নাশকতার মামলায় ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ ক’জন সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হন আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা। আর গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এ পরিস্থিতিতে ৩১ অক্টোবর থেকে মোট ১২ দফায় অবরোধ পালন করে।
এছাড়া ৪ দফায় হরতাল পালন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক দফা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখে বিএনপি।
এদিকে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নেন। এছাড়াও বিএনপির বর্তমান ও সাবেক অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন দলে যোগ দিয়ে এবং কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এসব কারণে তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি ছোট-বড় প্রায় তিন ডজন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি বছরব্যাপী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যুগপৎভাবে শতাধিক কর্মসূচি পালন করে। ২০০১ সালের আগে চারদলীয় জোট করে যেভাবে রাজপথ দখলে রেখে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে এবারও সেভাবে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু আন্দোলনে সফলতা অর্জন করতে না পারা ও নির্বাচন বর্জন করায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে তারা।