পলিথিন অপচনশীল পদার্থ। এর পরিত্যক্ত অংশ মাটির ভেতরে প্রবেশ করে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে এবং মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করে। পলিথিন কীভাবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে তা বহুল আলোচিত। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কেবল রাজধানী ঢাকাতেই প্রতিদিন অন্তত দেড় কোটি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এর যথেচ্ছ ব্যবহারে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা-নর্দমা ভরাট হচ্ছে; দূষিত হচ্ছে পানি। এটি নদী ও সাগরের তলদেশে জমা হয়ে জীববৈচিত্র ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতি করছে।
পরিবেশ, জনজীবন, জলাধার, ভূমি, নদী, সমুদ্র ও প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। প্রশাসনের নাকের ডগায় পলিথিন এবং নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্য দেদারসে বিক্রি ও ব্যবহার করা হলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই। পলিথিনের বিকল্প পণ্য বাজারে থাকলেও সেগুলোর ব্যবহার অতি সামান্য। এসব বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। তাই সহজলভ্য পলিথিনে বাজার সয়লাব। পলিথিনে ভরে গেছে দেশের নদী, এমনকি সাগরের তলদেশও। সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পলিথিন এবং প্লাস্টিক বর্জ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে অনেক নদনদীতে মাছ আর পাওয়া যাবে না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’র বিধান অনুসারে দেশে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এতে পলিথিনের ব্যবহার কিছুটা কমে আসে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা নতুন উদ্যমে পলিথিন ফিরিয়ে আনেন। প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে দেশে এখন পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে আইনের কার্যকর প্রয়োগ না থাকায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। জানা যায়, মাটিতে প্লাস্টিকের তৈরি টক্সিক রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, যা একপর্যায়ে খাদ্যচক্রে মিশে যায়।
প্লাস্টিক মানবদেহে বহু জটিল ব্যাধির পাশাপাশি ক্যানসারও সৃষ্টি করে। নবজাতকের সবচেয়ে নিরাপদ খাবার মাতৃদুগ্ধেও বিজ্ঞানীরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। দেশের নদীগুলোর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর পড়েছে; কয়েক ফুট পুরু পলিথিনের আস্তরণ জমার কারণে নদীদূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। পলিথিনের প্রভাবে নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত