সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সুন্দরবনে নদীর তীরবর্তী গাছের ওপর উড়াউড়ি করছে বকের দল। অক্টোবর-নভেম্বর এলেই দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলজুড়ে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের যে ভিড় দেখা যায়, এ বছর তার ছিটেফোঁটাও নেই সাতক্ষীরা রেঞ্জে। সাধারণত কলাগাছিয়া ঘাটে ট্রলারের সারি, গাইডের হাঁকডাক আর বনবিভাগের কাউন্টারে লম্বা লাইন- এই পরিচিত দৃশ্যই জানান দিত পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু এবার নদীর ঘাটগুলো নীরব, বাতাসে শুধু জোয়ারের শব্দ। ট্যুর অপারেটরদের মুখে হতাশা আর স্থানীয়রা বলছেন- এমন পর্যটক-খরা আগে দেখেননি। ভাঙাচোরা রাস্তা আর নৌযানের সংকটের কারণেই মূলত এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন উন্মুক্ত হলেও কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে; তবু পর্যটকের পদচারণা নেই বললেই চলে। বনবিভাগের হিসাব বলছে, আগে যেখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০টি নৌযান বনে প্রবেশ করত, এবার তা নেমে এসেছে ১০টির নিচে। এই ধস শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জের অর্থনীতি নিয়ে নয়, গোটা দেশের ইকো-ট্যুরিজম খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটন করিডোর তৈরি, সড়ক উন্নয়ন, বড় জলযান সংযোজন, স্থানীয় গাইড প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা জোরদার ও ডিজিটাল প্রচার বাড়াতে পারলে সাতক্ষীরা রেঞ্জ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই রেঞ্জকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে এখন প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ।
বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন ইনচার্জ জিয়াউর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর ধারণা ছিল অক্টোবরের শেষ দিকে পর্যটকের ভিড় দেখা যাবে। কিন্তু দোবেকি ও কলাগাছিয়া এলাকায় যে কয়েকজন আসছেন, তারা মূলত একদিনের সফরকারী। দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ করবেন এমন পর্যটক প্রায় নেই। তার মতে, ব্যয় বৃদ্ধি, লঞ্চের অভাব, ছোট ট্রলারের নিরাপত্তাহীনতা আর ভাঙাচোরা সড়কের কারণে পর্যটকরা সহজ পথ হওয়ায় খুলনা বা মোংলা বেছে নিচ্ছেন।
নিরাপদ ও আরামদায়ক জলযানের সংকট সাতক্ষীরা রেঞ্জের পর্যটন বিপর্যয়ের অন্যতম বড় কারণ। বড় লঞ্চ বা ভেসেল না থাকায় পরিবার, নারী বা শিশু নিয়ে দীর্ঘ সফরে এখানে আসতে অনেকে ভয় পান। স্থানীয় ট্যুর অপারেটর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনা-মোংলায় বড় জলযান রয়েছে, আর সাতক্ষীরা রেঞ্জে শুধু ছোট ট্রলার। নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় পর্যটকরা আসেন না। নিজেরা বড় লঞ্চ আনতে চাইলেও অনুমতি, ব্যয় এবং পর্যটক সংকট- তিন দিক থেকেই বাধা।
পর্যটকদের ওপর অতিরিক্ত খরচও বড় চাপ তৈরি করেছে। বুড়িগোয়ালিনী থেকে কলাগাছিয়া পর্যন্ত একদিনের ট্রলার ভাড়া ১,৮০০ টাকা; সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রবেশ ফি, পাস ফি ও গাইড ফি। তিন দিনের সফরে একজন পর্যটকের খরচ ৭,৫০০ থেকে ৯,০০০ টাকা পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ট্রলার ভাড়া নৌযানপ্রতি নির্ধারিত হওয়ায় একক পর্যটকের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অসম্ভব। ঢাকা থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুই বন্ধু মিলে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু পুরো ট্রলারের ভাড়া দিতে হবে শুনে আগ্রহ হারিয়েছেন। খুলনা থেকে কম খরচে আরও বেশি জায়গা দেখা যায় বলেই তারা দিক পরিবর্তন করেন।
জটিলতা আছে পারমিট ব্যবস্থা নিয়েও। সাতক্ষীরা রেঞ্জে এখনো পূর্ণাঙ্গ পারমিট সুবিধা না থাকায় পর্যটকদের দীর্ঘ সফরে যেতে হলে খুলনায় গিয়ে পারমিট নিতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয়। স্থানীয় ট্যুর অপারেটর মিজান সরদারের ভাষায়, খুলনায় গিয়ে পারমিট করতে হয়- এতে অন্তত একদিন নষ্ট হয়, বাড়তি খরচ তো আছেই। পর্যটকরা অপ্রয়োজনীয় ঝামেলায় যেতে চান না।
ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে সড়ক যোগাযোগের করুণ দশা। সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, ধুলোবালি উড়ছে সর্বত্র। রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় সাতক্ষীরা শহর থেকে বুড়িগোয়ালিনী পৌঁছাতে লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। শহর থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোনো বাস সার্ভিস না থাকাও বড় অসুবিধা।
এই বিপর্যয়ের ভয়াবহতা সবচেয়ে স্পষ্ট রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যানে। গত বছরের সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ১৬ লাখ টাকা। চলতি বছর একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ লাখে অর্থাৎ ৬৫ শতাংশেরও বেশি ধস। সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, রাজস্ব কমলে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও ব্যাহত হয়। পর্যটন না বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সাতক্ষীরা রেঞ্জ চরম অবহেলিত। খুলনা রেঞ্জে করমজল বা হারবাড়িয়ার মতো পর্যটনকেন্দ্র থাকলেও এখানে নেই কোনো তথ্যকেন্দ্র, গাইড অফিস, সরকারি লজ বা মানসম্মত বিশ্রামাগার। নিরাপত্তা টহলও সীমিত।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী জাকির হোসেন মনে করেন, জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সাতক্ষীরা রেঞ্জ সুন্দরবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও পর্যটন উন্নয়নে পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। রাতযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা থাকেন না। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে মানসম্মত রেস্টুরেন্ট ও গেস্টহাউস তৈরি হলে চিত্র অনেকটাই বদলে যেতে পারে।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মনিরুল ইসলাম মিনি বলেন, অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগে আগ্রহী; কিন্তু ব্যাংক ঋণ ও অনুমতির জটিলতায় কেউ এগোতে পারেন না। অথচ পরিকল্পিতভাবে এগোলে রাজস্ব, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সরকার খুলনা ও মোংলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন উন্নয়ন করছে, কিন্তু সাতক্ষীরা রেঞ্জ অবহেলার শিকার। পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা, নিরাপদ নদীপথ, ইকো-রিসোর্ট গড়ে তুললে এটি খুলনা-মোংলার মতোই জনপ্রিয় হতে পারে।
অক্টোবর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মানেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলজুড়ে সুন্দরবন ভ্রমণের মৌসুম। এ সময়টাতে সাধারণত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে নদীর ঘাট। কলাগাছিয়া ঘাটে থাকে সারি সারি ট্রলার, গাইড আর বন বিভাগের পাশের কাউন্টারে থাকে লম্বা লাইন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। মৌসুমের শুরুতেই নিস্তব্ধ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ। চারপাশে শুধু জোয়ারের শব্দ আর ট্যুর অপারেটরদের হতাশ মুখ।
বন খুললেও পর্যটন ফিরছে না : জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু দুই মাস পার হয়ে গেলেও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়নি সাতক্ষীরা রেঞ্জে। বন বিভাগের তথ্যমতে, এ সময় সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৭০টি নৌযান বনে প্রবেশ করে। কিন্তু এবার সে সংখ্যা দৈনিক গড়ে ১০টিরও কম। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন ইনচার্জ এই প্রতিবেদককে বলেন, নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর আমরা ভেবেছিলাম অক্টোবরের শেষে পর্যটকের ভিড় বাড়বে। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। কলাগাছিয়া, দোবেকি এলাকায় যারা যাচ্ছেন, তারা মূলত এক দিনের পর্যটক। তিন দিনের পর্যটক কম। রাজস্ব আদায়ও গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের নিচে।
তিনি আরো বলেন, এই রুটে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থায় সাধারণ পর্যটকরা খুলনা বা মোংলাকে বেছে নিচ্ছেন।
ভালো মানের জলযান না থাকায় পর্যটক নিরুৎসাহিত: সাতক্ষীরা রেঞ্জের অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে মানসম্মত জলযান সংকট। তিন দিনের ভ্রমণের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক লঞ্চ বা বড় ভেসেল এখানে নেই। যা কিছু আছে, তা ছোট ট্রলার। যেখানে পরিবার বা নারী-শিশু নিয়ে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় ট্যুর অপারেটর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের এখানে খুলনা বা মোংলার মতো বড় জলযান নেই। পর্যটকরা পরিবার নিয়ে আসতে চায়, কিন্তু ছোট ট্রলারে তারা নিরাপদ মনে করেন না। খুলনার নৌযান আনতে গেলে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমরা নিজেরা লঞ্চ আনতে চাই, কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি, আর্থিক সক্ষমতা ও পর্যটক স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বন বিভাগের পাস ও গাইড ফি বেড়েছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি ট্রলার ভাড়াও ঊর্ধ্বমুখী। এক দিনের জন্য বুড়িগোয়ালিনি থেকে কলাগাছিয়া পর্যন্ত ট্রলার ভাড়া পড়ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা, সঙ্গে যোগ হচ্ছে পাস ফি, গাইড ফি, প্রবেশ ফি ইত্যাদি। তিন দিনের ভ্রমণে একজন পর্যটকের খরচ পড়ছে ৭,৫০০ থেকে ৯,০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ট্রলার ভাড়া নির্ধারিত থাকে পুরো নৌযানের জন্য। একজন যাক বা ১৫ জন, খরচ একই। ফলে একা বা দুইজন পর্যটক গেলে তাদের জন্য খরচ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
‘দুই বন্ধু মিলে সুন্দরবন দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুরো ট্রলার ভাড়া দিতে হবে শুনে ইচ্ছা চলে গেল। খুলনা বা মোংলা থেকে গেলে কম খরচে করমজলসহ বেশ কিছু জায়গা ঘোরা যায়।’
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুই বন্ধু মিলে সুন্দরবন দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুরো ট্রলার ভাড়া দিতে হবে শুনে ইচ্ছা চলে গেল। খুলনা বা মোংলা থেকে গেলে কম খরচে করমজলসহ বেশ কিছু জায়গা ঘোরা যায়।’
অনুমতির জটিলতা আর সময়ক্ষেপণ : সাতক্ষীরা রেঞ্জে তিন দিনের সফরে যেতে হলে পাস পারমিট নিতে খুলনায় যেতে হয়। স্থানীয় পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ পারমিট সেবা চালু না থাকায় পর্যটকদের সময়, অর্থ ও যাতায়াতে বাড়তি চাপ পড়ছে।
স্থানীয় ট্যুর অপারেটর মিজান সরদার বলেন, খুলনায় গিয়ে পারমিট করতে হয়। এতে অন্তত এক দিন নষ্ট হয়ে যায়, বাড়তি খরচ তো আছেই। পর্যটকরা এসব ঝামেলায় যেতে চায় না।
যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটনের বড় অন্তরায়: সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। বর্তমানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি অবস্থায়, ধুলাবালি উড়ছে সর্বত্র, ফলে যান চলাচল ধীরগতি। রাস্তাটি ভাঙা-চোরা হওয়ায় সাতক্ষীরা শহর থেকে বুড়িগোয়ালিনি পর্যন্ত যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আরো বড় সমস্যা হলো- সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন-সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত কোনো বাস সার্ভিস নেই।
শ্যামনগরের স্থানীয় ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, রাস্তা যেমন খারাপ, তেমনি সরাসরি যানবাহনও নেই। একাধিক যানবাহন বদলে যেতে হয়। ফলে পরিবার নিয়ে যাওয়া কষ্টকর।
পর্যটন অবকাঠামো চরম ঘাটতি: খুলনা রেঞ্জে করমজল বা হারবাড়িয়ার মতো সাজানো পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও সাতক্ষীরা রেঞ্জে সে রকম কিছু নেই। এখানে নেই কোনো তথ্যকেন্দ্র, পর্যটক বিশ্রামাগার কিংবা সরকারি লজ। এমনকি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী বনপ্রহরী টহলও খুব সীমিত।
পর্যটন মৌসুমে নির্জন সুন্দরবন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে শুধুই হতাশা
স্থানীয় পরিবেশকর্মী জাকির হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জ সুন্দরবনের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অংশ। এখানে হরিণ, বাঘ, কুমির, নানা প্রজাতির পাখি দেখা যায়। কিন্তু পর্যটন বিকাশে কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রশাসন বা ট্যুরিজম বোর্ড কেউই উদ্যোগ নিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি পর্যটনবান্ধব নীতিমালা করা যায়, তাহলে এখানকার মানুষদের বিকল্প জীবিকা যেমন তৈরি হবে, তেমনি রাজস্বও বাড়বে।’
‘পর্যটকরা সকালে আসে, বিকেলে ফিরে যায়, রাতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কেউ থাকতে চায় না। অথচ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে যদি কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট ও গেস্ট হাউস তৈরি হতো- তাহলে পর্যটন ব্যবসা অনেক বাড়ত।’
রাজস্ব কমে বন বিভাগের মাথাব্যথা: গত বছরের একই সময় সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ টাকা। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মিলিয়ে আদায় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ টাকার মতো। ফলে বন বিভাগের বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও হুমকির মুখে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারীবন সংরক্ষক ফজলুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাজস্ব কমলে আমাদের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও প্রভাব পড়ে। পর্যটন না বাড়লে এই পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে।’
পর্যটন বিকাশে প্রয়োজন পরিকল্পনা ও প্রচারণা: বিশেষজ্ঞদের মতে, সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটন বিকাশে সরকারের সার্বিক পরিকল্পনার অভাবই মূল বাধা। এখানে পর্যটন করিডর তৈরি, সড়ক উন্নয়ন, মানসম্মত জলযান সংযোজন, স্থানীয় গাইড প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা জোরদার ও ডিজিটাল প্রচারণা বাড়ানো গেলে পর্যটন ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাতক্ষীরা রেঞ্জে টেকসই পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন চাইলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অংশীদারত্বে ছোট আকারের ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার তৈরি করতে পারে। এতে বন সংরক্ষণও হবে, অর্থনীতিও সচল হবে।’
মুন্সীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ‘আগের তুলনায় এখন কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। জেটি আর টয়লেট নির্মাণ হয়েছে, এতে পর্যটকদের কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি পার্কিং, রেস্টুরেন্ট আর থাকার মতো হোটেল না থাকায় তারা বেশ কষ্টে পড়েন। যারা দূরদূরান্ত থেকে আসেন, তাদের জন্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ট্রলারগুলো সংস্কার করি, ভাড়া দিই। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাই না। পর্যটন মৌসুমে কোস্টগার্ড, বন বিভাগ, প্রশাসন, সব দিকেই অনুমতির ঝামেলা পোহাতে হয়। কেউ এক জায়গায় অনুমতি দেয়, অন্য জায়গায় আটকে দেয়। এতে পর্যটকরা বিরক্ত হয়, আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা সকালে আসে, বিকেলে ফিরে যায়, রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কেউ থাকতে চায় না। অথচ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে যদি কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট ও গেস্ট হাউস তৈরি হতো- তাহলে পর্যটন ব্যবসা অনেক বাড়ত।’
আনিছুর রহমানের দাবি, এখন সুন্দরবনে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ঘাট মুন্সীগঞ্জ। অথচ এখানকার সুযোগ-সুবিধা এখনো ন্যূনতম পর্যায়ে। সরকার একটু মনোযোগ দিলে, এখানকার মানুষই সুন্দরবনকেন্দ্রিক বড় একটা পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘সরকার সবসময় খুলনা ও মোংলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন উন্নয়ন করছে, কিন্তু সাতক্ষীরা রেঞ্জ চরমভাবে অবহেলিত। সুন্দরবনের সবচেয়ে প্রাণবৈচিত্র্যপূর্ণ অংশ এই অঞ্চলে হলেও একে এখনো সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র বা পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এটাই সবচেয়ে বড় বৈষম্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি সাতক্ষীরা রেঞ্জকে জাতীয় পর্যটন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হতো, তাহলে এখানে অবকাঠামো, রাস্তা, জলযান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হতো। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব, সবখানেই ক্ষতি হচ্ছে।’
‘পরিবেশের কথা বলে সবাই পর্যটনে বিনিয়োগের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু মানুষতো সারা বিশ্বেই প্রকৃতি আর পরিবেশ দেখতে যায়, তাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলো চলে কীভাবে? সেখানের পরিবেশ নষ্ট হয় না?’
অ্যাডভোকেট বেলাল আরো যোগ করেন, ‘সরকারি বিনিয়োগ বা পর্যটন করপোরেশনের মনোযোগ এখানে খুব কম। অথচ স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। যদি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র, ইকো-রিসোর্ট বা নদীপথে নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সাতক্ষীরা রেঞ্জ খুলনা-মোংলার চেয়েও জনপ্রিয় গন্তব্য হতে পারে।’
তিনি বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও পর্যটন বোর্ডকে বার বার অনুরোধ করেছি সাতক্ষীরা রেঞ্জকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার জন্য। এটা শুধু পর্যটনের স্বার্থে নয়, বরং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবিকা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মনিরুল ইসলাম মিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরায় অনেক উদ্যোক্তা সুন্দরবন ঘিরে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকগুলো এই খাতে লোন দিতে আগ্রহ দেখায় না। আবার সরকারি অনুমতি পেতেও নানা প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়তে হয়।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পরিবেশের কথা বলে সবাই পর্যটন বিনিয়োগের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু মানুষতো সারা বিশ্বেই প্রকৃতি আর পরিবেশ দেখতে যায়, তাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলো চলে কীভাবে? সেখানের পরিবেশ নষ্ট হয় না?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে পর্যটন খাতটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টর’ হিসেবে দেখা হয়। অথচ এই খাত যদি সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে শুধু রাজস্ব নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। কর্মসংস্থান বাড়বে, স্থানীয় পণ্যের বিক্রি বাড়বে, এমনকি নারীদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা সম্ভব।’
মনিরুল ইসলাম মিনি মনে করেন, সরকার চাইলে খুব সহজেই সাতক্ষীরা রেঞ্জের পর্যটন খাতকে সম্ভাবনার খাত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাংক ঋণ সহজ করা, প্রশাসনিক অনুমতি প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত করা, আর বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা।
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মিসেস আফরোজা আক্তার বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জে সুন্দরবন পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক বেশি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কাজ শুরু করেছি। শ্যামনগর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হলে পর্যটকদের জন্য যাতায়াত আরো সহজ হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও তথ্যসেবাতেও আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই পর্যটকরা যেন নিরাপদ ও আরামদায়কভাবে সুন্দরবন ঘুরে দেখতে পারেন। এ জন্য স্থানীয় ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটন সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভায় বিষয়টি অগ্রাধিকারভিত্তিতে আলোচনায় আনা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক যোগ করেন, পর্যটন শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুন্দরবনকে ঘিরে টেকসই ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তুলতে আমরা সরকারিভাবে নীতিগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
পর্যটনের ভরা মৌসুমেও পশ্চিম সুন্দরবনে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক আসছে না। এজন্য বনবিভাগের অতিরিক্ত ভ্রমণকর নির্ধারণ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ট্যুর অপারেটররা। সুন্দরবনে পর্যটক কমে যাওয়ায় এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা পার করছেন অলস সময়। এতে একদিকে ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও ট্রলারের মালিকরা লোকসানে পড়ছেন, অন্যদিকে কমেছে বনবিভাগের রাজস্ব আদায়।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ভ্রমণের ভরা মৌসুম চলছে এখন। করোনা মহামারির আগে এ সময়ে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকত সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলো। তবে এবছর চিত্র ভিন্ন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জ হয়ে সুন্দরবন দেখতে আসা পর্যটকরা কলাগাছিয়া, দোবেকি, মান্দারবাড়িরা সমুদ্র সৈকত, দুবলার চর এবং হিরোনপয়েন্ট এলাকা ভ্রমণ করে থাকেন। এরমধ্যে কলাগাছিয়ায় ভ্রমণে গিয়ে একদিনের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। এছাড়া অন্য চারটি স্থানে ভ্রমণ করতে হলে আগে থেকে বন বিভাগের কাছে অনুমতি নিতে হয়। তবে সুন্দরবনের এসব পর্যটন স্পটগুলোতে ঘোরার জন্য পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো, আবাসিক ব্যবস্থা ও খাবার হোটেল না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় পর্যটদের।
মুন্সিগঞ্জের ট্যুর ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন উকিল এই প্রতিবেদককে বলেন, পর্যটক কমে যাওয়ায় পর্যটনের লঞ্চ ও ট্রলারের সঙ্গে জড়িতরা এখন বেকার বসে আছেন। একই সঙ্গে মালিকরা বিনিয়োগ করে লোকসান দিচ্ছেন। এখান থেকে বনবিভাগ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য হঠাৎ করে রাজস্ব বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেন তিনি।
ট্রলার মালিক মো. মনিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আগে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের বাইরে জনপ্রতি পর্যটকের প্রতিদিনের রাজস্ব ছিল ৭০ টাকা, সেটি বর্তমানে করা হয়েছে ১৫০ টাকা। এছাড়া অভয়ারণ্য এলাকায় ১৫০ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে করা হয়েছে ৩০০টাকা। বিদেশি পর্যটকদের দিতে হবে দিনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। একইভাবে সব ধরনের নৌযান, লঞ্চ ও ট্রলারের ফি দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে আমাদের খরচ বেড়েছে। ট্যুর প্যাকেজের মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন সাতক্ষীরার সভাপতি কে এম আনিছুর রহমান বলেন, নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে তেমন পর্যটক আসছেন না। আমাদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই সুন্দরবন বিভাগ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আকস্মিকভাবে সুন্দরবন ভ্রমণের রাজস্ব ফি দ্বিগুণ-তিনগুণ বৃদ্ধি করেছে। এজন্য সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের খরচও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এজন্য কেউ সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছেন না।
তিনি বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনে তিনদিন দুই রাত ভ্রমণের জন্য ইকোনমি প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ এখন সাত হাজার টাকা যা আগে ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার। ডিলাক্স প্যাকেজে এখন জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার নিতে হচ্ছে। আগে ছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এছাড়া একদিনের জন্য যারা সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন, তাদের জন্য ট্রলার অনুযায়ী দৈনিক ভাড়া ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। বর্তমানে করা হয়েছে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বর্তমানে ছোট নৌযানের নিয়মিত ভাড়া থাকলেও বড় নৌযানগুলোর বুকিং অর্ধেকেরও কম। ফলে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
তবে বনবিভাগের মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে।বলেন, সুন্দরবনে অন্যবারের তুলনায় পর্যটক সংখ্যা কিছুটা কম। শীত কমলে পর্যটক বাড়বে। পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে কলাগাছিয়াসহ পশ্চিম সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এ জেড এম সামির রহমান এই প্রতিবেদক কে বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জ হয়ে পর্যটক কমেনি। তবে সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক কম যাচ্ছে। সুন্দরবনে তিনদিনের ভ্রমণ কমলেও খুলনার করমজল ও সাতক্ষীরার কলাগাছিয়ায় পর্যটকরা একদিনের জন্য বেশি ভ্রমণ করছে।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামো নির্মাণসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। শুধু দেশে নয়, বিশ্বের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। শীত মৌসুম এলে সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছর লাখো পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে যান। কিন্তু এ বছরের চিত্র ভিন্ন। পর্যটনের ভরা মৌসুমেও সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলো এখন প্রায় পর্যটকশূন্য।
এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটনশিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। পাশাপাশি এবার পর্যটন খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যটন স্পটের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন। কিন্তু গত দুই মাসে তেমন পর্যটকের দেখা মেলেনি সুন্দরবনে।
পর্যটনের ভরা মৌসুমেও সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলো এখন প্রায় পর্যটকশূন্য
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণরোধে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্রেগুলো খোলা হয়। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। এতে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীশূন্য হয়ে পড়ে সুন্দরবন। পরিবহন ধর্মঘট থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নৌযানে ভাড়া না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে লঞ্চ ও জালিবোর্ড কর্মচারীদের। তবে পর্যটন খাতের বিকাশ ধরে রাখতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও এটি রাখতে চান ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বিটু ও জাহিদ মোল্লা জানান, পর্যটনশিল্প আগের চেয়ে বিকাশিত হয়েছে। গত দুই বছর করোনাকালীন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই খাতে। তারপরও পর্যটনশিল্প সচল রাখতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এটি নিচ্ছেন তারা। তবে বর্তমানে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মানুষের আয়ের তুলনায় খরচ বেড়েছে। তাদের আসা-যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই পর্যটনশিল্প কিছুটা হুমকির মুখে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই খাতে নজর দিলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলেও জানান তারা। তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। পর্যটকরা আগে লঞ্চ ও বোট বুকিং দিলেও এখন বাতিল করেছেন। ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সুন্দরবন দেখতে রাজশাহী থেকে আসা শাজ্জাদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর পরিবার নিয়ে সুন্দরবনে ঘুরতে আসি। করোনার কারণে গত দুই বছরে আসা হয়নি। এ বছর তিনগুণ বাস এবং বোট ভাড়া দিয়ে এসেছি।
গত দুই মাসে তেমন পর্যটকের দেখা মেলেনি সুন্দরবনে
করোনা মহামারির আগে শীত মৌসুমে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্র থেকে ৩৫-৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। কিন্তু এ বছর গত দুই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত